Digha: সমুদ্রের ঢেউয়ে বিদ্যার আবাহন, দিঘা এখন ‘সহজ পাঠ’

এবার দিঘা সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নন্দলাল বসুকে। জানতে পারবে বাঙালির শিকড়।

Digha: সমুদ্রের ঢেউয়ে বিদ্যার আবাহন, দিঘা এখন 'সহজ পাঠ'
দিঘা সৈকতের দেওয়ালে চিত্রায়ণ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 18, 2023 | 5:10 AM

দিঘা: আরও সুন্দরী হয়ে উঠছে দিঘা (Digha)। পর্যটক টানতে আরও নতুন রূপে সাজানো হল সৈকত শহর দিঘাকে। এবার দিঘা সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindra Nath Tagore) এবং নন্দলাল বসুকে (Nandalal Basu)। জানতে পারবে বাঙালির শিকড়। শুনতে অবাক লাগছে! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে এবার নান্দনিকতা বাড়তে দিঘার বিশ্ব বাংলা (Biswa Bangla) উদ্যানের দেওয়ালে তুলে ধরা হল ‘সহজ পাঠ’ দৃশ্য।

‘ছোট খোকা বলে অ আ, শেখেনি সে কথা কওয়া’। প্রথম ভাগ ‘সহজ পাঠ’ বইয়ে স্বরবর্ণ পর্যায়ে প্রথমে খুঁজে পাওয়া ছোট খোকাকে। আর বড়দের মধ্যে ‘বড়ো বৌ’টিকে। জ্বলন্ত উনুনের ওপরে ভাতের হাঁড়িতে চাল ফুটছে, আর উনুনের সামনে পিঁড়িতে অনেকটা উবু হয়ে বসে ছবির সেই বড় বউ। ডান হাতে ভাতের হাঁড়িতে কাঠি দিচ্ছে। কে ওই ‘ও ঔ’? সে কি শ্বশুর, না কি শাশুড়ি, না কি তার স্বামী? কীরকম একটা আদেশের ভঙ্গি! বউমার মুখে- চোখে ভাব— হ্যাঁ হয়ে আছে। ফ্যানটা গেলেই যাচ্ছি যাচ্ছি। সাদা-কালো ছবিতে তার কালো মুখে গভীর পরিশ্রম আর উদ্বেগের ছবি। বইয়ে কবিতার চেয়ে বেশি কথা বলছে ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই স্মরণীয় সৃষ্টি ‘সহজ পাঠ’ বইটি ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে। সদ্য পড়তে শেখা ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকের কাছেই এখন অজানা নন্দলাল বসুর অসাধারণ আঁকার এই শিল্পকর্ম। কেননা বর্তমানে বাঙালি ঘরের অধিকাংশ খুদে ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়া। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে কবিগুরু ও নন্দলাল বসুর শিল্পকর্ম তুলে ধরতে এবং এলাকার নান্দনিকতা বাড়াতে সহজ পাঠ-কেই আশ্রয় করে নিল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ।

Digha

বিশ্ব বাংলা উদ্যানের দেওয়ালে চিত্রায়ণ।

ওল্ড দিঘার সৈকতাবাস আবাসনের ঠিক সামনে প্রথম বিশ্ব বাংলা উদ্যান। সেখানে জেলাশাসকের বাংলো কল্যাণ কুটিরের দেওয়ালে সহজ পাঠ বইয়ে রবীন্দ্রনাথের ছড়ার সঙ্গে যেভাবে নন্দলাল বসু ছবি এঁকেছেন, হুবহু সেই লেখা ও ছবিই চিত্রিত হচ্ছে। সাদা-কালো রঙে দেওয়াল জুড়ে জেগে উঠছে খোকার অবয়ব, বাদল দিনের কথা ইত্যাদি। আক্ষরিক অর্থেই আরও নতুন করে সেজে উঠছে বিশ্ব বাংলা উদ্যান। এভাবে বিশ্ব বাংলার দেওয়াল সাজানোর পিছনে যেমন নান্দনিকতা বাড়ানোর চেষ্টা রয়েছে, তেমন বিশেষ উদ্যোগও রয়েছে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্তার কথায়, “দেওয়াল জুড়ে পানের পিক কিংবা বিজ্ঞাপনী আবর্জনায় দৃশ্যদূষণ চিরাচরিত ঘটনা। এবার এই নান্দনিক দৃশ্য চিরাচরিত দৃশ্যদূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।”

Digha

বিশ্ব বাংলা উদ্যানের দেওয়ালে চিত্রায়ণ।

যদিও দেওয়াল সাজানোর উদ্যোগ এটাই প্রথণ নয়। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের প্রশাসক মানসকুমার মণ্ডল বলেন, “এর আগে বিশ্ব বাংলা উদ্যানে দাবার বোর্ড- সহ বিভিন্ন মডেল, বিবেকানন্দের মূর্তি বসানো হয়েছিল। তবে কবিগুরুর সাহিত্য সৃষ্টি এই প্রথম। সহজ পাঠের স্বরবর্ণ পর্যায়ের সবকটি লেখা ও ছবি ফুটিয়ে তোলা হবে পুরো দেওয়ালজুড়ে। ইতিমধ্যেই অনেকটাই এগিয়েছে সে কাজ। বাকি কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। পর্যটকরা এসব প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আমাদের আশা সহজ পাঠের এই চিত্রাঙ্কন পর্যটকদের আরও বেশি আবেগঘন করে তুলবে। আর দেওয়ালজুড়ে এমন চিত্র ফুটে উঠলে দূশ্যদূষণ থেকেও মুক্তি মিলবে।”

Digha

দিঘা গেট।

উল্লেখ্য, সামনেই ২৫ বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিন। তার আগে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে এবং সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক- সকলেরই।