Ghatal : বছর ঘুরলেও হয়নি বাঁধ মেরামত, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ খাতায়-কলমেই, বর্ষার আগে আশঙ্কায় বাসিন্দারা

Ghatal : গত বছরের অগস্টে বন্যায় মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যায় প্লাবিত রাস্তাগুলির অবস্থা এখন বেহাল। বছর ঘুরলেও সংস্কার হয়নি রাস্তা।

Ghatal : বছর ঘুরলেও হয়নি বাঁধ মেরামত, 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান' খাতায়-কলমেই, বর্ষার আগে আশঙ্কায় বাসিন্দারা
কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের রূপায়ন কবে হবে কেউ জানে না
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 14, 2022 | 3:09 PM

ঘাটাল : প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হওয়া যেন নিয়ম হয়েছে দাঁড়িয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের (Ghatal Master Plan) কথা প্রতিবার শোনেন। কিন্তু, কবে তা বাস্তবায়ন হবে, তা কেউ জানে না। সামনেই বর্ষা কাল। ফের বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ঘাটালবাসী। ঘাটাল ব্লকের মনসুকা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা গত বছর বন্যায় প্লাবিত হয়। নদীবাঁধ ভেঙেছিল। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলির অবস্থা আজও বেহাল। বছর ঘুরে ফের বর্ষা আসার সময় হলেও রাস্তা ও নদীবাঁধ মেরামত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে বাসিন্দারা।

মনসুকা থেকে পালপুকুর হয়ে ঘাটালগামী গুরুত্বপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা রাস্তার উপর একাধিক জায়গায় ভেঙেছে কালভার্ট। আর তাতেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাতায়াত। অপরদিকে মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝুমি নদীর পাড় বরাবর প্রায় তিন জায়গায় ভেঙেছে নদীবাঁধ। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি কংক্রিটের রাস্তা, তাও ধসে গিয়েছে নদীতে।

এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, গত বছরের অগস্টে বন্যায় মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। যার জেরে ঝুমি নদীর তীরবর্তী রাস্তা-সহ একাধিক রাস্তায় ধস নামে । এলাকাবাসীর আশঙ্কা, দ্রুত রাস্তা মেরামত না করলে, বর্ষা আসলে চরম সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। নদীবাঁধ মেরামত না করলে ঝুমি নদীর জল ঢুকে প্লাবিত হবে বহু গ্রাম। নষ্ট হবে ফসল সহ চাষের জমি ।

এবিষয়ে মনসুকা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাত্রি পণ্ডিত সাতিক বলেন, ” নদীবাঁধ ও রাস্তা নিয়ে সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হবে।”

ঘাটাল ব্লকের বিডিও ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক বলেন, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অনেক এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। এমনকি গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেচ দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “ঘাটাল বন্যাপ্রবণ এলাকা। তাই ম্যাজিকের মতো কাজ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি। আর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য সকলেই চেষ্টা করছে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন হলে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

প্রত্যেক বছর বন্যায় হুগলি জেলার কিছু এলাকা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা ও ডেবরা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু অংশ বন্যার জলে ডুবে । আর এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, এমনই মনে করছেন এলাকার মানুষজন। এমনকি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়নের দাবিতে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন কমিটিও তৈরি করা হয়েছে।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান-

নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকমতো না থাকায় প্লাবিত হয় ঘাটাল। শিলাবতী, ঝুমি ও কংসাবতী নদীর জল বাড়লে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকে। রূপনারায়ণ দিয়ে সেই জল বেরিয়ে গেলে সমস্যা কাটে। কিন্তু, তা না হওয়ায় এলাকাবাসী দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মূলত ঘাটালকে ঘিরে থাকা মূল নদী এবং শাখা নদীগুলির নিয়মিত ড্রেজিং করা। যাতে সেগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং বন্যার হাত থেকে ঘাটাল রক্ষা পায়। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন করতে লাগবে কোটি কোটি টাকা। আর সেই টাকার কে কতটা দেবে, তা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন চলছে। এখনও পর্যন্ত সঠিক ভাবে টাকা বরাদ্দ না হওয়ার জন্যই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন হয়নি।

বন্যার সমস্যা নিয়ে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি আশিস হুদাইত বলেন, “তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো খালগুলোকে খননের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র টাকা না দেওয়ার জন্যই এখনও পর্যন্ত সেই ভাবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ন হয়নি। কিন্তু ঘাটালবাসীর কথা ভেবে যে কোনও উপায়ে এই নদী নালাগুলিকে ধীরে ধীরে সংস্কার করে জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে ঘাটাল মহকুমা সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।”

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। তিনি বলেন, “তৃণমূলের কোন সদিচ্ছাই নেই ঘাটাল মাস্টার রূপায়নের জন্য। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে সবার আগে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা ভাববে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র উদ্যোগ নিয়েছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বিষয়ে। তাই বন্যার সময় আমাদের নেতারা ঘাটাল-সহ বন্য কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।”

রাজনীতির টানাপোড়েন ঘাটালের সাধারণ মানুষ জানতে চান না। তাঁদের একটাই আশা, দ্রুত বন্যার সমস্যার সমাধান হোক। আর বর্ষার আগেই বাঁধ মেরামত করা হোক। এখন দেখার, বর্ষার আগে ঘাটালবাসীর দাবি পূরণ হয় কি না।