‘স্বাস্থ্যসাথীতে এই চিকিৎসা হয় না,’ কার্ড নাকচ করে কাঠগড়ায় হাসপাতাল, পাল্টা ‘যুক্তি’ কর্তৃপক্ষের
Swastha Sathi Card: হাসপাতালের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা উপলব্ধ। কিন্তু সেই সরকারি কার্ড নাকচ ও রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কাঠগড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির সত্যসাঁই সেবা সদন।
পূর্ব মেদিনীপুর: হাসপাতালের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা সেখানে উপলব্ধ। কিন্তু সেই সরকারি কার্ড নাকচ ও রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কাঠগড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির সত্যসাঁই সেবা সদন।
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকা সত্ত্বেও রোগী ফেরানো, প্রকল্পের সুযোগ থেকে রোগীর পরিবারকে না দেওয়ার ভুরিভুরি অভিযোগ রাজ্যজুড়ে। এতে নবতম সংযোজন কাঁথির সত্যসাঁই সেবা সদন নামের বেসরকারি হাসপাতাল। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অনুমোদিত নার্সিংহোম হোম হওয়া সত্বেও সাধারণ রোগীদের হয়রানি করে চলছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা প্রদান তো দূরের কথা, তুলনামূলক পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রোগীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় এগরা-১ ব্লকের সাহাড়া অঞ্চলের দক্ষিণ শীপুর গ্রামের মহামায়া পাহাড়ি (৪৬) প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন সত্যসাঁই সেবা সদনে। রোগীর স্বামী অনন্ত পাহাড়িকে জানানো হয়, পরিষেবা বাবদ প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা করে চার্জ হাসপাতালের। রোগীর আত্মীয় স্বজন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। সেই টাকা নিয়ে যখন দর কষাকষি করছে হাসপাতাল, তখন রোগীর অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটকজনক হয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু করার জন্য মহামায়া দেবীর পরিবারের লোকজন ২৪ তারিখ নগদ ২০ হাজার টাকা সত্যসাঁই সেবা সদনে জমা দেন। পরের দিন অর্থাৎ, ২৫ জুলাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে পুনরায় নগদ ২০ হাজার টাকা জমা দেন রোগী পরিবার। সবমিলিয়ে রোগীর পরিবার ৪০ হাজার টাকা জমা দেন।
এর মধ্যে ২৫ তারিখ রাতেই মহামায়া দেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রোগীর পরিবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা হেতু টাকা ফেরতের দাবি করেন। কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টার জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়ে অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা ফেরতের আবেদন করেন মৃতার স্বামী। অভিযোগ, সেই আবেদনে কর্ণপাত না করে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে মহামায়া পাহাড়ির মৃতদেহ নিয়ে আত্মীয়স্বজন শীপুরে ফিরে গিয়ে দাহ করেন। মৃতার স্বামী গত ২৯ তারিখে কাঁথি পুরসভায় সরকারি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা নস্যাৎ করে সত্যসাঁই সেবা সদনের বিরুদ্ধে চড়া হারে টাকা নেওয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে অভিযোগ করেন।
কাঁথি পুরসভা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বলেন প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য মামুদ হোসেন। রোগীর আত্মীয় সত্যজিৎ পাহাড়ি বলেন,”রোগী আমার কাকিমা। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাঁর। তাই আমরা এই নার্সিংহোমে ভাল চিকিৎসা হয় বলে নিয়ে আসি। প্রথমে রোগীকে ভর্তি করি। তখন নার্সিংহোম মৌখিক ভাবে জানায় যে ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে প্রতিদিন। খুব গরিব পরিবার রোগীর কথা বলে বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়দের থেকে ২০ হাজার টাকা কোনওভাবে ব্যবস্থা করে জমা দিই। পরের দিন ওরা আবার টাকার জন্য চাপ দেয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা বহু কষ্টে অর্থের ব্যবস্থা করে জমা করার পর বলি আমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। তাতে তো বিনা পয়সায় চিকিৎসা হওয়ার কথা। ওঁনারা বলেন, এই কার্ডে এই চিকিৎসা হবে না। ওই দিন রাতেই কাকিমা গত হন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। এখন এই ধার করা টাকা জমি বিক্রি করে শোধ করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি একদিনের টাকা রেখে বাকি ১৫ হাজার ফেরত দিন। তারা উল্টে ১০ হাজার দাবি করে। আমরা দিশাহারা।”
এই বিষয়ে সত্যসাঁই সেবা সদনের ম্যানেজার অজয় কুমার দাস বলেন, “জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের পরিষেবা বা চিকিৎসা গত কোনও ত্রুটি নেই। রোগীর জন্য ২৫ হাজারের প্যাকেজ নিতে হবে বলেছি। দু’দিনের জন্য ৫০ হাজার দিতে হবেও বলেছি। কিন্তু ওনারা ৪০ হাজার দিয়েছেন এবং রোগী মারা গিয়েছেন। তাই বাকি টাকা আমরা চাইনি। আর স্বাস্থ্যসাথীর আমরা সি গ্রেড ক্যাটেগরিতে পড়ি। তাই মেডিসিন সংক্রান্ত রোগী এই সুবিধা পাবে না।থ কেবল ওটি পেসেন্টই স্বাস্থ্যে সাথীর আওতায় পড়বে।”
সমগ্র ঘটনা Tv9 বাংলার প্রতিনিধির মারফত শুনে জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন,”জেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে আমি বিষয়টি দেখি। কিন্তু আলাদা করে দফতর রয়েছে আমাদের জেলা শাসক অফিসে। কিন্তু স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় থেকেও কার্ডের পরিষেবা মানুষ পাবে না তা হতে পারে না। অভিযুক্ত নার্সিংহোমের নামে পরিবারে তরফে যদি অভিযোগ করেন, তাহলে জেলা শাসক হিসেবে আমি বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখব। এবং কী কারণে তালিকাভুক্ত নার্সিং হোম হওয়া সত্ত্বেও পরিষেবা দেননি তার কারণ দর্শাতে হবে হাসপাতালকে।” আরও পড়ুন: ‘দিদি প্রধানমন্ত্রী হতে দিল্লি গিয়েছেন, তাতেই বন্যা!’ জলে ঢাকা ঘাটাল থেকে কটাক্ষ দিলীপের