করোনা যুদ্ধে ৮ ‘মারণাস্ত্র’ বিশ্বের হাতে, কোন ভ্যাকসিনে কতটা বাগ মানবে করোনা?

বিশ্বজুড়ে মোট আটটি কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ভারতে এখন পর্যন্ত তিনটি ভ্যাকসিন অর্থাৎ কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন এবং স্পুটনিক-ভি অনুমোদন পেয়েছে।

করোনা যুদ্ধে ৮ 'মারণাস্ত্র' বিশ্বের হাতে, কোন ভ্যাকসিনে কতটা বাগ মানবে করোনা?
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 11, 2021 | 4:36 PM

জ্যোতির্ময় রায় : বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী রোখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় টিকাকরণই। বিগত দেড় বছরে বিশ্বে ১৭.৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোভিড -১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব জুড়ে এখন দ্রুতগতি টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে এই মহামারীকে জয় করা যায়।

করোনাযুদ্ধে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই তাদের দেশে গণটিকাকরণ শুরু করেছে। ভারত সহ একাধিক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলিতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মোট আটটি কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ভারতে এখন পর্যন্ত তিনটি ভ্যাকসিন অর্থাৎ কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন এবং স্পুটনিক-ভি অনুমোদন পেয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের উহান শহর থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা মানব সমাজ সঙ্কটের মুখে পড়েছে। কোটি কোটি মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন,  প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করেন। যদিও এই অল্প সময়ের মধ্যে ১০০ শতাংশ কার্যকরী করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব নয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ কোটি ডোজ় ভ্যাকসিন পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমানে কোভিশিল্ড, কোভাক্সিন এবং স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনই দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে উৎপাদন কম হওয়ায় স্পুটনিক-ভি সীমিত পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।

করোনাযুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে যে ৮ টি ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হচ্ছে-

কোভ্যাক্সিন: এটি সম্পূর্ণ দেশীয় টিকা। হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেক এই করোনা টিকাটি তৈরি করেছে। দুটি ডোজ়ের এই ভ্যাকসিন করোনা রোধে ৭৮ শতাংশ কার্যকরী। এটি ব্রিটেনে প্রথম খোঁজ মেলা ভ্যারিয়েন্ট সহ আরও কয়েকটি ভ্যারিয়েন্ট বিরুদ্ধেও কাজ করে।

কোভিশিল্ড: এটিও দুটি ডোজ়ের করোনা ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগিতায় পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে এই ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ কার্যকরী। এটি দক্ষিণ আফ্রিকা (বি ১৩৫১) ও ব্রিটেনে প্রথম খোঁজ মেলা ভ্যারিয়েন্ট (বি ১১৭)-র বিরুদ্ধেও কার্যকর, তবে ব্রাজিলে প্রথম খোঁজ মেলা করোনা ভ্য়ারিয়েন্ট (পি ১)-র বিরুদ্ধে খুব একটা কার্যকর নয়।

স্পুটনিক-ভি: এটি রাশিয়ায় উৎপাদিত দুটি ডোজ়ের ভেক্টর ভ্যাকসিন। করোনা রুখতে এই ভ্যাকসিন ৯১ শতাংশ কার্যকর বলেই দাবি করা হয়েছে।

ফাইজার-বায়োএনটেক: এটিও দুটি ডোজ়যুক্ত ভ্যাকসিন। সংক্রমণ রুখতে ৯৫ শতাংশ কার্যকরী। এটি ব্রিটেন (বি ১১৭), দক্ষিণ আফ্রিকা (বি ১৩৫১) এবং ব্রাজিল (পি ১)-এ প্রথম খোঁজ মেলার বিরুদ্ধেও কার্যকর।

জনসন ও জনসন: এটি বিশ্বের একমাত্র ভ্যাকসিন, যা একটি ডোজ়েই করোনা সংক্রমণ রুখতে সক্ষম। এটি সংক্রমণ ৬৬ শতাংশ কার্যকর। এটি ব্রিটেন (বি ১১৭), দক্ষিণ আফ্রিকা (বি ১৩৫১) এবং ব্রাজিলে (পি ১) প্রথম খোঁজ মেলা ভ্য়ারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কাজ করে। তবে বি ১৩৫১ এবং পি ১ এর বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিন খুব একটা কার্যকর নয়।

মডার্না: ফাইজা়রের মতো এটিও দুটি ডোজ়ের ভ্যাকসিন। এটি করোনার বিরুদ্ধে ৯৫ শতাংশ কার্যকর। এটি ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে প্রথম খোঁজ মেলা করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর।

সিনোভাক বায়োটেক: এটি চিনের একটি ভ্যাকসিন। এটিও দুটি ডোজের ভ্যাকসিন, যা করোনা রুখতে ৫০ শতাংশ কার্যকর।

নোভাভ্যাক্স: দুই ডোজ়ের এই ভ্যাকসিন করোনা রুখতে ৮৯ শতাংশ কার্যকর। এটি যুক্তরাজ্য এবং ব্রাজিলে খোঁজ মেলা ভ্যারিয়েন্টগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর।

আরও পড়ুন: ‘করোনাকে জৈব অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার’, পরিচালকের বিতর্কিত মন্তব্যে দেশদ্রোহের মামলা বিজেপির