Afghanistan Earthquake: আফগানিস্তানে গণকবর, ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পেই এত বড় মৃত্যুমিছিল কেন?
Afghanistan: ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন অধিকর্তা জ্ঞানরঞ্জন কয়ালের বক্তব্য, "অন্যতম দায়ী ভূমিকম্পের অগভীর কেন্দ্র। কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার নীচে।"
ক ম লে শ চৌ ধু রী
১০ মাসের তালিবানি শাসনে ধুঁকছে আফগানিস্তান। রেহাই দিল না প্রকৃতিও। ভূমিকম্পে ভয়াবহ অবস্থা। হাজারের বেশি মৃত্যু। দেড় হাজারের বেশি জখম। একটি পরিবারে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একটি পরিবারে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। একটি পরিবারে বেঁচে শুধু চার বছরের শিশু। চারদিকে হাহাকার। কে কাকে হাসপাতালে নিয়ে ছুটবে? কে কার শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করবে? খোঁড়া হচ্ছে গণকবর।
মার্কিন ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ শুরুতে জানিয়েছিল, ভূমিকম্পের মাত্রা ৬.১। পরে জানানো হয়, মাত্রা আদতে ৫.৯। ভূমিকম্পের কেন্দ্র খোস্ত থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে, পাকতিকা অঞ্চলে। জায়গাটা একেবারে পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া। পাহাড়ি এলাকা, প্রত্যন্ত অঞ্চল। বুঝে ওঠার আগেই শেষ অনেক কিছু।
এ বারের মতো মৃত্যুমিছিল শেষবার আফগানিস্তান দেখেছে ২০ বছর আগে। ২০০২ সালে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে বাঘলান, বাদাখশান মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১,১০০ জনের। তার আগে ১৯৯৮ সালে তাখর প্রদেশে ৬.৪ মাত্রার কম্পনে প্রাণ যায় অন্তত ৪,৭০০ জনের। এ বারের ভূমিকম্পের মাত্রা সেই তুলনায় অনেক কম।
৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্পেই এত বেশি মৃত্যু কেন?
খড়্গপুর আইআইটি-র ভূতত্ত্বের অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথের বক্তব্য, “আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এখানে ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের নীচে ঢুকে যাচ্ছে। জাগ্রস ফল্টও সক্রিয়। ফলে হিন্দুকুশ, কারাকোরাম তল্লাটে বছরভর ভূমিকম্প হতেই থাকে।” এ বার তুলনায় কম ধাক্কাতেও যে ক্ষতি বেশি হল, তার পিছনে মূলত তিনটি কারণ উঠে আসছে।
ভারতীয় ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন অধিকর্তা জ্ঞানরঞ্জন কয়ালের বক্তব্য, “অন্যতম দায়ী ভূমিকম্পের অগভীর কেন্দ্র। কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার নীচে। ফলে যে ‘এস’ তরঙ্গে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, তার ধাক্কা অনেক বেশি সইতে হয়েছে মাটির উপরের ঘরবাড়িকে। কেন্দ্র গভীরে হলে ধাক্কা কম লাগত।” দ্বিতীয় কারণ, পাকতিকা অঞ্চলের বাড়ির দুর্বল কাঠামো। বেশিরভাগই মাটির বাড়ি বা কাদার সঙ্গে পাথর মিশিয়ে তৈরি দেওয়াল। দুর্বল কাঠামোর বাড়ি কম্পন সইতে পারেনি। তৃতীয় কারণটি হল সময়। রাত দেড়টা নাগাদ মাটি কেঁপে ওঠে। বেশিরভাগ বাসিন্দাই তখন গভীর ঘুমে। চিরঘুমে চলে যেতে সময় লাগেনি! ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, দিনে হলে, বাড়ির বাইরে থাকার সুবাদে মৃত্যু এত বেশি হত না।
আফগানিস্তানের ভূমিকম্প এবং মৃত্যুমিছিল, দুই-ই ৩০ বছর আগে লাতুরের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই হুবহু মিল। ১৯৯৩ সালে মহারাষ্ট্রের লাতুর যে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যুমিছিল দেখেছিল, তার পিছনেও অন্যতম দায়ী ছিল ভূমিকম্পের অগভীর কেন্দ্র। ঠিক আফগানিস্তানের মতোই, ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার নীচে ছিল কেন্দ্র। ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে মাটি কেঁপে উঠেছিল গভীর রাতে। গণেশ চতুর্থীর উত্সব পালন করে ক্লান্ত শরীরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন মারাঠিরা। সেই ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে চলে যান হাজার হাজার মানুষ। লাতুরের বাড়ির কাঠামোও ছিল অনেকটা আফগানিস্তানের বাড়িগুলোর মতো। শঙ্করবাবুর কথায়, “লাতুরেও বেশিরভাগ বাড়ির দেওয়াল তৈরি হয়েছিল কাদার সঙ্গে পাথর মিশিয়ে। বিল্ডিং কোডের কোনও বালাই ছিল না। ফলে বাড়িগুলো কম্পনের ধাক্কায় ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে।”
ভূমিকম্পের ক্ষতি ঠেকাতে মজবুত বাড়ি জরুরি। আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রকৃতি। কলকাতা শিখবে কী?