TV9 Bangla Explained on St Martin Island: সেন্ট মার্টিনের জন্যই কি হাসিনাকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র? ৩ বর্গ কিমির এই দ্বীপ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

TV9 Bangla Explained on St Martin Island: ছোট্ট এই দ্বীপের পোশাকি নাম সেন্ট মার্টিন হলেও, বাংলাদেশের বাসিন্দাদের কাছে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ বা দারুচিনি দ্বীপ হিসাবেই পরিচিত। প্রচুর পরিমাণে নারকেল ও দারুচিনি গাছ থাকার কারণেই এই নাম। আগে এই দ্বীপ তেকনাফ উপদ্বীপেরই অংশ ছিল, কিন্তু পরে একটা বড় অংশই সমুদ্রে তলিয়ে যায়।

TV9 Bangla Explained on St Martin Island: সেন্ট মার্টিনের জন্যই কি হাসিনাকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র? ৩ বর্গ কিমির এই দ্বীপ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কেন বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ?Image Credit source: TV9 বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Aug 12, 2024 | 11:34 AM

ঢাকা: শুরুটা হয়েছিল সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন দিয়ে, ধীরে ধীরে তা গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা বা  সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পুরনো রায়ই বহাল রাখে। জয় হয় মেধার। কিন্তু তারপরও আন্দোলন থামেনি। এবার দাবি ওঠে একটাই। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার ইস্তফা চাই। গত ৫ অগস্ট, ক্ষোভের আগুন চরম সীমায় পৌঁছয়। বিপদ বুঝেই দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। যাওয়ার আগে ইস্তফা দেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। তবে ইস্তফা দিয়ে একদমই খুশি নন হাসিনা। বরং ভীষণই মন খারাপ তাঁর। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি নাকি বলেছেন, বাংলাদেশের অশান্তির পিছনে আমেরিকার হাত রয়েছে। তিনি যদি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তুলে দিতেন আমেরিকার হাতে, তবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হত না। যদিও হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনা এমন কোনও কথাই বলেননি। কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা- তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, হাসিনার ওই বক্তব্য়ে যে বিষয়টি সকলের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে, তা হল সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড। কোথায় এই দ্বীপ? কী-ই বা এত গুরুত্ব বা ক্ষমতা রয়েছে এই দ্বীপের যার জন্য শেখ হাসিনাকে ১৫ বছরের শাসন ফেলে রেখে, দেশ ছাড়তে হল?

সেন্ট মার্টিন কোথায়?

হাসিনার বক্তব্যে উঠে আসা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড বা দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে, বাংলাদেশ উপকূল থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজারের কাছেই অবস্থিত এই দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ। মাত্র ৩ স্কোয়ার কিলোমিটারে বিস্তৃত এই দ্বীপে আনুমানিক ৩৭০০ মানুষ বসবাস করেন যাদের পেশা হল মাছ ধরা, ধান ও নারকেল চাষ। এছাড়া সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবালও উৎপাদন করা হয়, যা শুকিয়ে মায়ানমারে রফতানি করা হয়।

অতি সাধারণ এই দ্বীপ ঘিরে এত টানাপোড়েন কেন? সম্প্রতিই শোনা গিয়েছিল, বাংলাদেশের আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির নেত্রী খালেদা জিয়া এই দ্বীপকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। এই দাবি করেছিলেন খোদ শেখ হাসিনা। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গোপন সামরিক ঘাঁটি বানাত আমেরিকা। এর বিনিময়ে আমেরিকা বিএনপি-কে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করত।

যদিও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে এই দাবিতে খারিজ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌমত্ব রক্ষা হোক, এমনটাই চায় আমেরিকা বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, আমেরিকা কেন এই ছোট্ট দ্বীপকে দখল করতে চায়? এর জন্য এই দ্বীপের ইতিহাস জানা জরুরি।

নারিকেল জিঞ্জিরা থেকে সেন্ট মার্টিন-

ছোট্ট এই দ্বীপের পোশাকি নাম সেন্ট মার্টিন হলেও, বাংলাদেশের বাসিন্দাদের কাছে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ বা দারুচিনি দ্বীপ হিসাবেই পরিচিত। প্রচুর পরিমাণে নারকেল ও দারুচিনি গাছ থাকার কারণেই এই নাম। আগে এই দ্বীপ তেকনাফ উপদ্বীপেরই অংশ ছিল, কিন্তু পরে একটা বড় অংশই সমুদ্রে তলিয়ে যায়। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেন্ট মার্টিন।

১৮ শতাব্দীতে প্রথম আরবের ব্যবসায়ীরাই সমুদ্রপথে এসে এই দ্বীপে পৌঁছয় এবং বসবাস শুরু করে। নাম দেওয়া হয় জাজ়িরা। ১৯০০ দশকে ব্রিটিশরা তাদের ভূখণ্ডের অংশ বলেই দাবি করে। খ্রিস্টান ধর্মযাজক সেন্ট মার্টিনের নামে এই দ্বীপের নাম দেওয়া হয়। অনেকে আবার দাবি করেন, চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার সেন্ট মার্টিনের নামে এই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল।

১৯৩৭ সালে মায়ানমার আলাদা হয়ে যায়, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ারই অংশ থেকে যায় সেন্ট মার্টিন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পাকিস্তানের অধীনে চলে যায় এই দ্বীপ। পরে আবার যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়, তখন বাংলাদেশের অংশ হয় দ্বীপ।

রোহিঙ্গা সমস্য়া-

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে চুক্তি হয় যে এই প্রবাল দ্বীপ বাংলাদেশেরই অংশ থাকবে। তবে মৎসজীবীরা অনেক সময়ই সামুদ্রিক সীমানা পার করে ফেলে, যার কারণে বহু বাংলাদেশীকে মায়ানমার নৌসেনা আটকও করে। তবে আসল সমস্যা শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারেই সবথেকে বড় রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্প রয়েছে। এবার কক্সবাজার যেহেতু সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সবথেকে কাছে, তাই মায়ানমারের নিষিদ্ধ গোষ্ঠী আরাকান সেনা একাধিকবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দখল করার চেষ্টা করেছে। বিগত কয়েক বছরের মায়ানমারের জুন্তা বাহিনী ও আরাকান সেনার মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে এই দ্বীপ ঘিরে। এরপরই বাংলাদেশী নৌসেনা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে।

কেন বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট মার্টিন?

বঙ্গোপসাগরে মায়ানমার ও বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমার একদম কাছে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে এই দ্বীপ অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জ়োনেরও অংশ এই দ্বীপ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।

সামুদ্রিক সম্পদে ভরপুর সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। প্রবাল দ্বীপ এটি। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মৎসজীবীদের জীবনযাপনও এই দ্বীপের উপরই নির্ভর করে। এই দ্বীপের আশেপাশেই বিপুল পরিমাণ হাইড্রোকার্বন সম্পদ রয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রচুর পর্যটকও যায় এই দ্বীপে। পরিবেশগতভাবেও অত্যন্ত সংবেদনশীল এই দ্বীপ। সেই কারণে এই দ্বীপ সংরক্ষণও জরুরি।

ভারতের অবস্থান-

বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় এই দ্বীপ ভারতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সীমা ও সুরক্ষা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এই দ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্ব রাখে। যেভাবে সম্প্রতি ভারত মহাসাগরে চিন তার প্রভাব বৃদ্ধি করছে, তাতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উপরও নজর রয়েছে।

আমেরিকার কেন নজর এই দ্বীপে?

বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সুরক্ষা, একাধিক ক্ষেত্রেই এই দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকার কাছে। বঙ্গোপসাগরে যেহেতু বাণিজ্যিক বিস্তার করছে আমেরিকা, তাই মুক্ত বাণিজ্যের জন্য এই রুট গুরুত্বপূর্ণ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা শোনা যায়, আমেরিকার সিআইএ এই দ্বীপ দখল করতে চায়। এখানে তাদের সামরিক ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক রুট ও বঙ্গোপসাগরের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণই হাতের মুঠোয় রাখতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌসেনার ঘাঁটি তৈরি করতে চায় আমেরিকা। এই নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। যদিও আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ কথা বরাবর অস্বীকার করেছে। তবে এই দ্বীপ আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে পড়বে। সেই কারণেই গত জুন মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে কোনওভাবেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে আমেরিকার হাতে তুলে দেবেন না।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)