Heart Attack: মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, জানালেন চিকিৎসকেরা!
কম বয়সিদের মধ্যে কেন বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা এবং এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনও সাধারণ মানুষ পড়েন, তাহলে তাঁদের করণীয় কী হবে, সেই বিষয়ে TV9 বাংলাকে নিজের মত জানালেন কার্ডিও বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী এবং কুণাল সরকার।
‘বিগ বস ১৩’-র বিজেতা সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যু সমগ্র দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ঘুমের মধ্যে ম্যাসিভ হার্ট অ্যার্টাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সি এই অভিনেতা। তারই মাসখানেক আগে হৃদরোগেই আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মন্দিরা বেদীর স্বামী তথা পরিচালক রাজ কুশল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫০। এঁদের বয়সগুলো দেখে বুঝতেই পারছেন যে, বার্ধক্য তখনও আসেনি তাঁদের জীবনে। তার আগেই আক্রান্ত হলেন হৃদরোগে এবং পরিণাম হল মৃত্যু।
কম বয়সিদের মধ্যে কেন বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা এবং এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনও সাধারণ মানুষ পড়েন, তাহলে তাঁদের করণীয় কী হবে, সেই বিষয়ে TV9 বাংলাকে নিজের মত জানালেন কার্ডিও বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী এবং কুণাল সরকার।
চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী কম বয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বৃদ্ধির পিছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন। TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যে, ইয়ং জেনারেশনের খাদ্যাভাস, ধূমপান, মানসিক চাপ এবং নিয়মিত শরীরচর্চা না করা হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলছে। কম বয়সিদের মধ্যে ফার্স্ট ফুড খাওয়ার চল বেশি, আর এই ফার্স্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে যা হার্টের ক্ষতি করে। যাঁরা নিয়মিত জিম করেন এবং তার সঙ্গে খাদ্যাভাস বজায় রাখেন তাঁদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কম। কিন্তু যাঁরা দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য অত্যধিক জিম করেন এবং যাঁরা ব্যায়ামের সঙ্গে খাদ্যাভাস বজায় রাখেন না তাঁদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি। এছাড়াও জেনেটিক এই রোগের অন্যতম একটি কারণ। তবে এমন নয় যে, ফ্যামিলি হিস্টোরি না থাকলে হার্ট অ্যাটাক হবে না।
মানসিক চাপও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। চিকিৎসক কুণাল সরকার জানিয়েছেন যে, মানসিক চাপ অত্যধিক বেড়ে গেলে অবশ্যই তার চিকিৎসা করানো দরকার, সেই সময় কাউন্সেলিং সাপোর্টের দরকার হয়। এতে মানসিক চাপের সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু অনেক সময় ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি কমানোর জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কিছু ওষুধের পরামর্শ দেন। অনেক সময় সেই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে হৃদরোগের মত একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসক কুণাল সরকার বছরে একবার হলেও ইসিজি (ECG) এবং নিয়মিত চেকআপ (full body checkup) করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
যে কোনও বয়সের মানুষ যদি হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাহলে কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে? এই সম্পর্কে চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী জানান যে, হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে ব্যথা (যন্ত্রণা), বুকে চাপ লাগা (অস্বস্তি), বুকের ডান বা বাঁ দিক অথবা উভয় দিকেই ব্যথা, বুকে ব্যথা শুরু হয়ে তা বাঁ হাত দিয়ে নেমে যেতে পারে অথবা চোয়াল দিয়ে ওপরে উঠে যেতে পারে। আরেকটি উপসর্গ হল অত্যধিক পরিমাণে ঘাম হওয়া। এর মধ্যে যে কোনও একটি লক্ষণ দেখা দিলেই প্রথমেই অ্যাসপিরিন ৩০০ মিলিগ্রাম (Aspirin 300 mg) জল দিয়ে খেয়ে নিন অথবা সরবিট্রেট (Sorbitrate) জিভের তলায় রেখে দিন অথবা চুষে চুষে খেয়ে নিন। তারপরের কাজটি হল, কাছাকাছি যে কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করে দিন রোগীকে।
বয়স কম হোক বা বেশি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় এই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি? নিয়মিত ব্যায়াম করুন আর তার সঙ্গে সঠিক ডায়েট মেনে চলুন। ফ্যাট কম, তার সঙ্গে সুগারও কম। আমরা যে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাই, সেই মিষ্টি লিভারে গিয়ে মেটাবলিজ হয়, সেখান থেকে তৈরি হয় কোলেস্টেরল। আর এই কোলেস্টেরল হল হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ। তেলে ভাজা বিশেষত ডিপ ফ্রাই (deep fry) জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। ডালদা তেলে রান্না করা খাবার একদম খাওয়া উচিত নয়। সিঙ্গারার মত খাবার হার্টের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক, এর থেকে কম তেলে ভাজা এগরোল জাতীয় খাবারে পেটের সমস্যা হলেও হার্টে কোনও ক্ষতি হয় না, কারণ এটা ডিপ তেলে ফ্রাই নয়। পরিবারের প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রতিমাসে ৫০০ মিলি তেল বরাদ্দ করা উচিত। আর যেটা হল ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: অসুখ এক হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি এবং রোগীরা কিন্তু আলাদা: চিকিৎসক রবীন চক্রবর্তী