Maharashtra: ১২০টি গাড়িতে লেখা ‘রাহুল ওয়েডস অঞ্জলি’, বরযাত্রীর বেশে আয়কর বিভাগ! মিলল ‘গুপ্তধন’
ঠিক যেন অজয় দেবগনের 'রেইড' সিনেমা। ১২০টি গাড়ি সাজিয়ে বরযাত্রীর বেশে হানা দিলেন মহারাষ্ট্র আয়কর বিভাগের কর্তারা। মিলল ৩৯০ কোটি টাকা মূল্যের বেহিসাবি সম্পদ।
মুম্বই: অজয় দেবগনের ‘রেইড’ সিনেমাটি মনে আছে? সেটি তৈরি হয়েছিল আয়কর দফতরের অভিযানের উপর ভিত্তি করে। আর এবার এই ছবির আদলে বাস্তবে অভিযান চালাল মহারাষ্ট্রের আয়কর বিভাগ। গতকালই (১১ অগস্ট) জানা গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের জালনায় আয়কর বিভাগের অভিযানের ৩৯০ কোটি টাকা মূল্যের বেহিসাবি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর এবার সামনে এল পুরো অভিযানের খুঁটিনাটি, যা কোনওভাবেই কোনও সিনেমার দৃশ্যের থেকে কম কিছু নয়। বরযাত্রী সেজে হানা দিয়েছিলেন আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। ১২০টি গাড়িও সাজানো হয়েছিল বরযাত্রীদের মানানসই করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বলিউডি স্টাইলে অভিযান চালালেন মহারাষ্ট্র আয়কর বিভাগের কর্তারা।
আয়কর বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্পাত, পোশাক এবং রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে এমন দুটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে কর ফাঁকি দিত বলে অভিযোগ ছিল আয়কর বিভাগের কাছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই, গত ৩ অগস্ট ওই দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রাঙ্গণ, গুদাম এবং খামারবাড়ি মিলিয়ে জালনার ১০ থেকে ১২টি জায়গায় হানা দিয়েছিলেন আয়কর বিভাগের কর্তারা। কোনওভাবে জানাজানি হয়ে গেলেই ওই প্রভাবশালী দুই গোষ্ঠী প্রমাণ লোপাট করে দিতে পারত। তাই এই অভিযানের বিষয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। এমনকি, বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও বলা হয়নি যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোথায় যাচ্ছেন।
এই অভিযানের জন্য আয়কর বিভাগের মোট ২৬০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে মোট পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছিল। মুম্বই, পুনে, নাসিক এবং ঔরঙ্গাবাদের কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অভিযানে অংশ নেন। প্রত্যেকেই ছিলেন বরযাত্রীর বেশে। অভিযানের জন্য মোট ১২০টি যানবাহন ব্যবহার করা হয়েছিল। অভিযানের বিষয়ে যাতে কেউ টের না পায়, সেই কারণে যানবাহনগুলিকেও এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যেন তারা কোনও বরযাত্রীর অংশ। যানবাহনগুলির গায়ে ‘রাহুল ওয়েডস অঞ্জলি’ (রাহুল ও অঞ্জলির বিবাহ) এবং ‘দুলহন হাম লে জায়েঙ্গে’ (আমরা বউ নিয়ে যাব) লেখা পোস্টার ছিল। ওই পোস্টারগুলি অপরাধীদের ধোকা দিয়েছিল ঠিকই, তবে একটা ভুল করে ফেলেছিলেন আয়কর বিভাগের কর্তারা। শ্রাবন মাসে হিন্দুদের বিবাহ হয় না। তবে অপরাধীদেরও সেই কথা মাথায় আসেনি। তাই তারা গাড়িগুলি নিয়ে কিংবা বরযাত্রীর বেশে থাকা আয়কর বিভাগের কর্তাদের আগমনে সন্দেহও করেনি।
শেষ পর্যন্ত এই বলিউডি পরিকল্পনা দারুণ কাজে এসেছে বলেই দাবি করেছেন আয়কর বিভাগের কর্তারা। প্রায় একসপ্তাহ ধরে চলা এই অভিযানে ৩৯০ কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৫৬ কোটি টাকার নগদ, ৩২ কেজি সোনা এবং ১৪ কোটি টাকা মূল্যের মুক্তো ও হিরে। এছাড়াও প্রচুর ডিজিটাল ডেটা-সহ অন্যান্য সম্পত্তির নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নগদ গণনা করতেই কর্মকর্তাদের প্রায় ১৩ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।