‘দেশদ্রোহ ব্রিটিশ আমলের আইন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কেন্দ্র বাদ দিচ্ছে না কেন?’
Sedition: 'একই ধরনের আইন ব্রিটিশরা মহাত্মা গান্ধীর ওপর ব্যবহার করেছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম রুখতে।'
নয়া দিল্লি: একটা বাংলা সিনেমার সংলাপ রয়েছে, ‘দেশ থাকলে দেশদ্রোহও থাকবে।’ ভারতের মাটিতে দেশদ্রোহ (Sedition) আইন শতাব্দী প্রাচীন। ১৮৭০ সালে জেমস স্টিফেন সংবিধানে ১২৪-এ ধারা যোগ করেন। তারপর থেকেই সংবিধানে আইন হয়ে রয়েছে দেশদ্রোহ। একাধিক রাজনীতিবিদ, সক্রিয় সমাজকর্মী এই আইনে জেল খেটছেন। জামিন না পেয়ে আইনের জ্বালায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এ বার সেই আইনেই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল এসজি ভোম্বাতকের সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন জমা দিয়ে দাবি করেছেন, এই আইন সম্পূর্ণ ভাবে অসাংবিধানিক। দ্রুত এই আইনের বিলুপ্তির দাবি করেছেন তিনি। সেই আবেদনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “দেশদ্রোহ ঔপনিবেশিক আইন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি আমাদের এই আইন চাই?” পাশাপাশি দেশদ্রোহ আইনের অপব্যবহার নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মত প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা।
খোদ প্রধান বিচারপতি এনভি রমন এই আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়। এই আইনে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “একটি কাঠ প্রয়োজন হলে পুরো জঙ্গলটাই কেটে ফেলা হয়। এটাই দেশদ্রোহ আইনের প্রভাব।” প্রধান বিচারপতি এনভি রমন বলেন, “সমস্যা হল এটি একটি ঔপনিবেশিক আইন। একই ধরনের আইন ব্রিটিশরা মহাত্মা গান্ধীর ওপর ব্যবহার করেছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম রুখতে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি আমাদের দেশে এই আইন প্রয়োজন?”
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এনভি রমন, বিচারপতি এএস বোপান্না, বিচারপতি হৃষিকেশ রায়ের বেঞ্চ জানায়, “আমাদের উদ্বেগের জায়গা হল আইনের অপব্যবহার। আমরা কোনও রাজ্য বা সরকারকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু দেখুন, কী ভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে ৬৬এ ধারা ব্যবহৃত হচ্ছে। কত সাধারণ মানুষ এর জন্য ভুগছেন।” সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পাল্টা অ্যাটর্নি জেনারেল ভেনুগোপাল জানান, এই আইন বাদ দেওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। এর সঙ্গে কিছু নির্দেশিকা যোগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চেও দেশদ্রোহ আইন বাদ দেওয়ার মামলার শুনানি চলছে। সেখানে কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কয়েকদিন আগেই ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত ফাদার স্ট্যান স্বামী জামিন না পেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তারপর থেকেই আরও জোরাল হচ্ছে এই আইনের প্রয়োজনীয়তার প্রশ্ন। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: মোদীকে খুনের চক্রান্তে অভিযুক্ত, কে এই স্ট্যান স্বামী?