বিশ্লেষণ: মোদীকে খুনের চক্রান্তে অভিযুক্ত, কে এই স্ট্যান স্বামী?
স্ট্যান স্বামীর পরিচয় কী? তিনি কি শুধুই ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত?
নয়া দিল্লি: ভেন্টিলেশনে যাওয়ার পর আপদকালীন পরিস্থিতিতে জামিন চেয়েছিলেন ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত জেসুইট যাজক স্ট্যান স্বামী (Stan Swamy)। শেষ পর্যন্ত জামিন হল না। হল মৃত্যু। পুলিশি হেফাজতে সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। প্রশ্ন উঠছে মানবধিকারের। বিরোধীরা একযোগে নিশানা করছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। আইনের গেরোয় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই হারিয়ে গেলেন আদিবাসীদের প্রতিবাদী কণ্ঠ। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর পর পত্রপত্রিকায় লেখা বেরচ্ছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা টুইট করেছেন। স্ট্যান স্বামীর পরিচয় কী? তিনি কি শুধুই ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ইউএপিএ আইনে অভিযুক্ত?
স্ট্যান স্বামী কে?
৩ দশক ধরে আদিবাসীদের অধিকারের দাবিতে লড়েছেন স্ট্যান স্বামী। তিনি ঝাড়খণ্ডের একজন জেসুইট যাজক। জমি, জঙ্গল ও শ্রমের অধিকার, মূলত আদিবাসীদের হয়ে এই ৩ দাবি তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি আদিবাসীদের জন্য উপদেষ্টা কমিটির দাবি করে এসেছেন আজীবন ।তাঁকে এনআইএ হেফাজতে নেওয়ার ২ দিন আগে তরুণ আদিবাসীদের ‘নকশাল’ তকমা দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। দাবি তুলেছিলেন সকলের জামিনের।
কেন জেলে যেতে হয়েছিল স্ট্যান স্বামীকে?
২০২০ সালের ৭ অক্টোবর গ্রেফতার হয়েছিলেন স্ট্যান স্বামী। ইউএপিএ আইনে এলগার পরিষদ মামলায় তিনি ছিলেন গ্রেফতার হওয়া ১৬-তম ব্যক্তি। এই একই মামলায় একই আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন অধ্যাপিকা সোমা সেন, আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেরা, আনন্দ তেলতুম্বেড, হ্যানি বাবু, রোনা উইলসন, ভার্নন গঞ্জালেস, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং ও সুধির ধাওয়ালরা।
কী এই ভীমা কোঁরেগাও-এলগার পরিষদের মামলা?
২০০৮ সালের পয়লা জানুয়ারি পুণেতে ভীমা কোঁরেগাওয়ে দলিতদের যুদ্ধ জয়ের ২০০ বছর পালিত হয়। ১৮১৮ সালে পেশোয়ারদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ জয়লাভ করেছিল সিংহভাগ দলিত সেনা-যুক্ত ব্রিটিশ সেনা। সেই পূর্তি অনুষ্ঠানে হিংসা ছড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের ভিত্তিতে পিম্পরি থানায় দুই হিন্দুত্ববাদী নেতা মিলিন্দ একবোটে, সম্ভাজি ভিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ৮ জানুয়ারি পুণে পুলিশ আরও একটি এফআইআর দায়ের করে, যেখানে দাবি করা হয়, হিংসার জন্য দায়ী ২০১৭ সালে ৩১ ডিসেম্বর হওয়া এলগার পরিষদ অনুষ্ঠান।এরপরই পুলিশ মাওবাদী যোগসূত্রের অভিযোগে এলগার পরিষদের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুনের পরিকল্পনা করার অভিযোগও ওঠে। ২০২০ সালে এই মামলার তদন্তভার হাতে তুলে নেয় এনআইএ। গ্রেফতার হন স্ট্যান স্বামী। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।
কী অভিযোগ ছিল স্ট্যান স্বামীর বিরুদ্ধে?
চার্জশিটে এনআইএ দাবি করেছিল, মাওবাদী সংযোগ রয়েছে স্ট্যান স্বামীর। তাঁকে সিপিআই(মাওবাদী)-র ক্যাডার বলে পরিচয় দিয়েছিল পুলিশ। এনআইএ দাবি করেছিল, স্ট্যান স্বামীর কাছ থেকে উদ্বেগজনক নথি, সাহিত্য ও প্রোপাগান্ডা উদ্ধার হয়েছিল। এরপর থেকেই অভিযুক্ত মহিলারা বাইকুল্লা জেলে ও পুরুষরা তালোজা জেলে বন্দি ছিলেন। আড়াই বছর কেটে গেলেও কারোর দোষ প্রমাণ হয়নি। স্রেফ ভরভরা রাও ছাড়া কেউ জামিনও পাননি।
আদিবাসীদের প্রতি নিবেদিত প্রাণ:
১৯৩৭ সালে তামিলনাড়ুতে জন্মেছিলেন স্ট্যান স্বামী। থিওলজি ও সোসিওলজি নিয়ে পড়াশোনা করে ১১ বছর সোশ্যাল ইনস্টিটিউট অব বেঙ্গালুরুতে ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন স্ট্যান স্বামী। এরপর ঝাড়খণ্ডে এসে আদিবাসীদের হয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে জোহরের (ঝাড়খণ্ড মানবাধিকার সংগঠন) হয়ে কাজ শুরু করেন স্ট্যান স্বামী। আদিবাসীদের নিজস্ব জমি, খনি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদের বঞ্চিত করার প্রতিবাদে বারবার প্রতিবাদ গড়ে তুলেছেন স্ট্যান স্বামী। সাংবিধানিক অধিকার, জঙ্গলের অধিকার-সহ আদিবাসীদের অন্যান্য দাবি সংগঠিত হয়েছিল স্ট্যান স্বামীর কণ্ঠে।তাঁর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত বাগিচা বেসরকারি সংস্থা আদিবাসী তরুণদের জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। ২০১৬ সালে স্ট্যান স্বামী আদিবাসীদের নিয়ে একটি গবেষণাপত্র আদালতে জমা করেছিলেন। যেখানে স্পষ্ট বলা ছিল ৯৭ শতাংশ আদিবাসীকে মিথ্যে মাওবাদি তকমা দেওয়া হয়েছে। আর ৯৬ শতাংশ আদিবাসীর মাসিক আয় ৫ হাজার টাকারও কম। সারা জীবন আদিবাসীদের স্বার্থে লড়ে, পুলিশি হেফাজতেই আজীবনের জন্য ‘জামিন’ পেয়ে গেলেন স্ট্যান স্বামী।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: আজ নীল রঙে মিশে গেছে ভেজাল…কারা চড়েন জেনে নিন
⇜ TV9 EXCLUSIVE: না পড়লেই নয় ⇝