Baishakhi Banerjee: ‘যে দিন শোভন আর আমাকে নিয়ে চর্চা বন্ধ হবে, সে দিন থেকে…’, যা বললেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়

Baisakhi Banerjee Saree Collection: প্রতিটা শাড়িই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সন্তানসম। বাড়ির ১০টা ওয়ার্ড্রোব এবং বাপের বাড়ির প্রায় সব আলমারি তাঁর দখলে

Baishakhi Banerjee: ‘যে দিন শোভন আর আমাকে নিয়ে চর্চা বন্ধ হবে, সে দিন থেকে...’, যা বললেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়
সব শাড়িই বৈশাখীর সন্তানসম
Follow Us:
| Updated on: Aug 12, 2022 | 4:43 PM

নারী মাত্রই শাড়ি পরতে ভালবাসেন, কিন্তু তিনি শাড়ি ‘আগলে’ রাখেন। ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় বাবার থেকে একটি শাড়ি উপহার পেয়েছিলেন, আজও তা যত্নে তুলে রেখেছেন আলমারিতে। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যত না বেশি তাঁর পেশা নিয়ে আলোচনা হয়, তার থেকেও অনেক বেশি চর্চায় থাকে তাঁর শাড়ি। বৈশাখী নিজেও কিন্তু তাঁর শাড়ির গল্প বলতে ভালবাসেন। এবং এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় তাঁর মধ্যে কোনও ক্লান্তি নেই। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্টাইল, বাড়িতে কত জোড়া আলমারি জুড়ে রয়েছে তাঁর শাড়ি—এ নিয়ে পাঠকদের মতো আমাদের মনেও ছিল একগুচ্ছ প্রশ্ন। TV9 বাংলার দফতরে এক বর্ষার দুপুরে বৈশাখীকে পেয়ে আমরা খুলে বসলাম প্রশ্নের ঝাঁপি। খুশি মনে সব আবদার মেটালেন তিনি।

তাঁর ‘আত্মজ’ 
প্রতিটা শাড়িই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সন্তানসম। বাড়ির ১০টা ওয়ার্ড্রোব এবং বাপের বাড়ির প্রায় সব আলমারি তাঁর দখলে। তবে প্রতিটা শাড়ির যত্ন বৈশাখী নিজের হাতে করেন। শাড়ি ধোওয়া, ইস্ত্রি করা, যত্ন করে ভাঁজ করা—সব করেন একার হাতেই। বাবা ছিলেন রক্ষণশীল মনের মানুষ। আর তাই-ই ছোট থেকে তাঁরা তিন বোন শাড়িই পরতেন। তার মধ্যে ছোট বোনের শাড়ির প্রতি ভালবাসা একটু বেশিই ছিল। বৈশাখীর কাছে আইডল হলেন তাঁর মা। ছোট থেকেই দেখে এসেছেন, মা সাদা শাড়ি বেশি পছন্দ করেন। সেখান থেকে তাঁর সাদা শাড়ির প্রতি প্রেম। একসময় আলমারি জুড়ে ছিল শুধুই সাদা শাড়ি। বিয়ের পর আবার পছন্দের রং-এর তালিকায় ঢুকে যায় লাল। এরপর কালো, সাদা, নীল—সব রং ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চললেও খুব গাঢ় রং বা ক্যাটক্যাটে রং তাঁর না-পসন্দ।
বন্ধুদের এমন মন্তব্যের বিরোধিতা বৈশাখী করে এসেছেন প্রথম থেকেই। যে সময়ে তিনি কলেজে পড়ছেন, সেই সময় ‘প্যারালাল ট্রাউজ়ার্স’ পরার খুব চল ছিল। তবে বরাবরই তিনি নিজের পছন্দের পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। তাই বৈশাখীর পছন্দ ছিল ‘স্ট্রেচেবল জিন্স’। তখন তিনি ত্বন্বী ছিলেন, ফলে নানা রকম পোশাকেও স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন। চাকরি পাওয়ার পর থেকে নিজের টাকায় শাড়ি কেনা শুরু। এখনও চলছে।
শাড়ির গল্প 
শাড়ি পরার এই ঝোঁকটা তাঁর মধ্যে আসে মায়ের থেকে। এখন অবশ্য তাঁর ক্লাস ফোরে-পড়া মেয়েও মায়ের দেখাদেখি শাড়ি পরতে চায়। ছোট থেকেই অষ্টমী আর দশমীতে নিয়ম করে শাড়ি পরাতেন মেয়েকে। নিজের জন্য যেমন খুঁজে-খুঁজে শাড়ি কেনেন, তেমনই মেয়ের জন্যও তাঁতিদের রীতিমতো অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনতেন। মা যেভাবে শাড়ির যত্ন করেন, ঠিক একইভাবে এখন নিজে শাড়ির যত্ন নেন তিনি। তাঁর দিদিমার শাড়ি এখনও সযত্নে রয়েছে মায়ের আলমারিতে। শাড়ি নিজে যত না কেনেন, তার থেকে উপহার পান বেশি। কোনও শাড়ি একবার পরা হলেই তা সঙ্গে সঙ্গে কেচে চলে যায় অন্য আলমারিতে। সামনে আসে সেইসব শাড়ি, যেগুলো পরা হয়নি। ফলে একই শাড়ির পুনরাবৃত্তি হয় না। ঘুরেফিরে আবার যখন সেই শাড়ি পরেন, তখন অন্ততপক্ষে পেরিয়ে গিয়েছে ২ বছর।
করোনার সময়ে নিজের মাস্কও বিশেষভাবে ডিজ়াইন করাতেন বৈশাখী। আর তা-ই রাতপোশাকের ডিজ়াইনও নিজেই করেন। এছাড়াও যে কোনও শাড়ি কিনতে যাওয়ার আগে একইরকম রিসার্চ করেন তিনি। সেই অঞ্চল, শাড়ির ইতিহাস জেনে সোজা হাজির হন তাঁতিদের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে কেনেন পছন্দের শাড়ি। বৈশাখীর সংগ্রহে প্রচুর শাড়ি রয়েছে। সবচেয়ে দামি শাড়িটির দাম ১ লক্ষ টাকা। কাঁথা স্টিচের শাড়ি জুড়ে রামায়ণের ১২ পর্বের গল্প। তবে এই শাড়িও উপহার পাওয়া, আছে সুন্দর এক নেপথ্য কাহিনিও। তাই এই শাড়ি সযত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। এই শাড়ির কারিগর (যিনি শান্তিনিকেতননিবাসী) রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন।
আলমারিতে পছন্দের শাড়ি গুছিয়ে রাখার সময়ও তিনি নিয়ম মানেন। যেমন সাদা রঙের শাড়ির জন্য একটা থাক। লাল, নীল—রং অনুযায়ী প্রতিটি শাড়ি গোছানো থাকে আলাদা-আলাদাভাবে। এছাড়াও শাড়ির ফ্যাব্রিক অনুযায়ী পৈঠানী, কাঞ্জিভরম, ইক্কত, বালুচরি, খাদি আলাদা করে রাখেন। কেন? এতে তাঁর শাড়ি বাছাইয়ে সুবিধে হয়। এছাড়াও এক বিশেষ বন্ধুর পরামর্শে ‘কালার স্কিম’ মেনে চলেন তিনি। কথায়-কথায় বন্ধু বলেছিলেন: সোমবার সাদা রঙের শাড়ি পরলে তাঁর ভাল হবে। কোনও রকম কুসংস্কার থেকে নয়, কিন্তু বৈশাখী ভেবে দেখলেন এইভাবে রং বেছে শাড়ি পরলে সপ্তাহের সাতদিন সাতরকম রং পরা যাবে।
ম্যাচিং করে সবার জন্য কেনাকাটা করেন একার হাতেই। পুজোয় তাঁর হাত থেকে উপহার পান অনেকেই। কাছের মানুষদের মধ্যে ১৫জন মহিলা এবং ৪০জন পুরুষ রয়েছেন। এঁদের জন্য পছন্দের পোশাক কেনা এবং ডিজ়াইন তিনি নিজেই করে দেন। সঙ্গে যাঁদের স্ত্রী, মেয়ে বা মা রয়েছেন তাঁদের সকলের জন্যেও শাড়ি উপহার দেন তিনি। জুন-জুলাই থেকেই শুরু হয়ে যায় তাঁর পুজোর শাড়ি-শপিং। মায়ের জন্য শাড়ি কিনেই শপিং শুরু হয় তাঁর। নিজের জন্য কেনেন মোটে দু’টো শাড়ি। একটি শোভনের আবদারে, অন্যটি তাঁর মায়ের ইচ্ছেয়।
একটা সময় বুটিক ছিল তাঁর। আবারও তিনি চান হ্যান্ডলুম শাড়ির একটি বুটিক খুলতে। এখনকার মেয়েরা হ্যান্ডলুমের শাড়ি পরতে পছন্দ করে। বৈশাখীর নিজেরও হ্যান্ডলুম বিশেষ পছন্দের। তিনি চান লাইফস্টাইল স্টোর খুলতে। যেখানে মেয়েরা পছন্দের শাড়ি কিনে সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ়, গয়না বানিয়ে নিতে পারবেন। শাড়ি আর ধুতির ঐতিহ্য তিনি ধরে রাখতে চান। আজকাল ছেলেরাও শাড়ি পরছেন। এই বিষয়টিও বিশেষ পছন্দ তাঁর। বরং তিনি তাঁদের appreciate করতে চান, কারণ তাঁরা শাড়ির গুরুত্ব বুঝেছেন।
‘বৌদি’ বৈশাখী 
তাঁর বাড়িতে গৃহ-সহায়ক হিসেবে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সকলেই নাকি বলেন: ‘‘আমাদের আলাদা করে শাড়ি কিনতে হয় না। বৌদির শাড়িতেই আমাদের হয়ে যায়।’’ তিনি নিজে যখন সাজেন, তখন শাড়ির কুঁচি ধরে দেন তাঁর বাড়ির সহায়িকারা। আর তাই-ই বৈশাখী মনে করেন, তাঁদেরও সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়াটা তাঁর দায়িত্ব। পুজের পাঁচদিন এঁরা সকলেই বৈশাখীর দেওয়া শাড়িই পরেন। সকলের জন্য ব্লাউজ়, শার্ট, পাঞ্জাবির ডিজ়াইনও করে দেন তাঁদের প্রিয় ‘বৌদি’। কস্টিউম জুয়েলারিও তাঁর বিশেষ পছন্দের। আর সেই সব গয়নাও তিনি নিজে ডিজ়াইন করে বানিয়ে নেন।
বৈশাখীর ফ্যাশান টিপস: 
*ফ্লেয়ারড প্যান্ট, স্লিভস আজকাল বেশ চলছে। কমবয়সী মেয়েদের দেখতেও বেশ ভাল লাগে
*টপের সঙ্গে শাড়ি পরলেও দেখতে বেশ ভাল লাগে
*যে পোশাকে নিজের ব্যক্তিত্ব সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠবে, যে পোশাকে ভিড়ের মধ্যে আপনি নিজেকে আলাদা করতে পারবেন, তেমন পোশাকই পরুন
*ফ্যাশানে চলছে বলেই যে জোর করে কিছু পরতে হবে, এমন ভাবনা না রাখাই ভাল