Republic Day Special: প্রকৃতির কাছেই ফিরছে ফ্যাশন, অটুট ‘পুরাতনী’র সঙ্গে মেলবন্ধনও…

ফ্যাশনে এখন আর কোনও বর্ডার লাইন নেই। ছেলেদের এবং মেয়েদের ফ্যাশন কিন্তু মিলেমিশে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পুরনো দিনের ফ্যাশনই আবার ঘুরেফিরে আসছে। আজরক থেকে হাকোবা- তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভারতের আঞ্চলিক পোশাকই এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন ট্রেন্ড তৈরি করছে

Republic Day Special: প্রকৃতির কাছেই ফিরছে ফ্যাশন, অটুট 'পুরাতনী'র সঙ্গে মেলবন্ধনও...
সত্তরের দশকের এই বিশেষ স্টাইল ফিরে এসেছে আবারও
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 26, 2022 | 5:53 PM

এই প্রতিবেদন শুরু করার আগে একববার ফিরে যেতে হয় ইতিহাসের পাতায়। ভারতের ইতিহাসের ( Indian History) সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে সংস্কৃতি। প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day 2022) খুবই গুরুত্বের। ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত হল সংবিধান। প্রজাতন্ত্র দিবস এই সংবিধান উদযাপনেরই দিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সংবিধান সভার ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ অগস্ট আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতে স্থায়ী সংবিধান (Constitution of India) প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। এই বছরের ৪ নভেম্বর খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়।

সংবিধান সভার ৩০৮ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। এর দু’দিন পর ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দিনেই সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ভারতের। তবে এই বিশেষ দিনটির জন্য আন্দোলন কিন্তু শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বিদেশী দ্রব্য বর্জন, স্বদেশী দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে স্বর্ণকুমারী দেবী ‘সখী সমিতি’ ও সরলাদেবী চৌধুরানী ‘লক্ষীরভাণ্ডার’ স্থাপন – এই সবকিছুর কিন্তু প্রভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে চরকায় বোনা খাদির কাপড়ের ব্যবহার বাড়তে থাকে ঘরে ঘরে।

পোশাকের হাজারো বৈচিত্র্যের ভিড়ে কিন্তু খাদি হারিয়ে যায়নি। বরং নবরূপে তা ফিরে এসেছে ফ্যাশন আঙিনায়। খাদির সঙ্গে কখনও মিশছে কাঁথা, পার্শি, ব্লকপ্রিন্ট, আজরক। আজকাল ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য- সহ একাধিক জায়গায় কদর বেড়েছে খাদির। প্রচুর পরিমাণে খাদির পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছে।

‘সনাতনীর সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন’- এটাই কিন্তু বর্তমানের ফ্যাশন ট্রেন্ড। আগেকার দিনে বিয়ে বা যে কোনও অনুষ্ঠানে শাড়ির সঙ্গে কোমরবন্ধ ছিল ঐতিহ্য। এখন সেই জায়গা নিয়েছে বেল্ট। নানা ফ্র্যাব্রিক, স্টোন দিয়ে বানানো হচ্ছে সেই বেল্ট। ছেলেদের পোশাক আর মেয়েদের পোশাক এখন আর আলাদা নয়। অ্যাসেমেট্রিক্যাল ( Asymmetrical) কাট এখন যেমন ছেলেদের পোশাকেও চলছে তেমনই কিন্তু মেয়েদের কুর্তাতেও থাকছে। ‘ফ্যাশনে এখন আর কোনও বর্ডার লাইন নেই। সেই সঙ্গে স্টাইলিস্টদের কদরও বেড়েছে আগের তুলনায় অনেকখানি’-জানালেন উমাইরার ডিজাইনার কর্ণধার (Ummaira) দেবরূপা ভট্টাচার্য।

Rabbadi Cocktail Blouse

রাবাড়ি ককটেল ব্লাউজ

দেবরূপা জানান, বর্তমানে হাকোবা খুবই জনপ্রিয়। হাকোবা ব্লাউজ, শাড়ি, ড্রেস সবই বানানো হচ্ছে। আর এই হাকোবাকে কিন্তু আশির দশকে ‘রয়্যাল ফ্র্যাব্রিক ‘ বলা হত। কারণ রাজা-রানিদের পোশাকেই এই ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হত। খাদির কাপড়েও মিশছে হাকোবা, লেস। পাশাপাশি ফিরেছে অরগ্যাঞ্জাও। অরগ্যাঞ্জা কিন্তু মূলত বেনারসের। বেনারসে কাতান, অরগ্যাঞ্জা, খাদি জর্জেট আর স্যাটির- এই চার রকম সিল্ক পাওয়া যায়। ৭০ এক দশকেও  অরগ্যাঞ্জা বেশ জনপ্রিয় ছিল। রাখি গুলজার, জয়া বচ্চন, রেখার মত অভিনেত্রীদেরও দেখা গিয়েছে এই পোশাকে। তখন অরগ্যাঞ্জার উপর জরির কাজই বেশি পছন্দ করতেন মেয়েরা।

Bohemian tie up blouse

স্ট্রেট বয়ফ্রেন্ড প্যান্টও সত্তরের অনুপ্রেরণা

ফিরে এসেছে হ্যান্ডওয়ার্কও।  আজকাল মেশিনের কাজের থেকে হাতের কাজের দর বেশি।  তেমনই ফ্যাশনে ইন রাজস্থানের আজরক । তবে এখন বাংলাতেও তৈরি হচ্ছে এই প্রিন্ট। তসর, বিষ্ণুপুর কাতান, লিলেনের উপর এই প্রিন্টের কাজ কিন্তু বেশ চলছে।  আজরকের সঙ্গে কখনও হাকোবা কখনও খাদি কিংবা র সিল্ক এসে মিশছে। ব্লাউজের হাতে কুঁচি, পেছনে দড়ির কাজ এমনটাও কিন্তু এখন বেশ চলছে। ব্লাউজ নিয়ে কম এক্সপেরিমেন্ট হয় না। ব্লাউজের ব্যাকে এই দড়ির ডিজাইন এসেছে গুজরাতি রাবাড়ি থেকে। জিনাত আমনকে এই ডিজাইনের ব্লাউজে অনেকবার দেখা গিয়েছে। মূলত গুজরাতের গ্রামের মহিলারা এরকম ব্লাউজ পরতেন। গুজরাত, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশের লোক সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে বর্তমান ফ্যাশনে, জানান দেবরূপা।  যা এখন পরিচিত ককটেল ব্লাউজ নামে।

এছাড়াও তিনি বলেন আজকালকার মেয়েদের মধ্যে Ready to wear saree খুবই জনপ্রিয়। যা এসেছে মহারাষ্ট্র থেকে। মহারাষ্ট্রের মেয়েরা যে ভাবে শাড়ি পরতেন সেভাবেই বানানো হয়েছে আজকের দিনের এই সহজ পোশাকটি। তার মধ্যে অবশ্য রয়েছে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ছোঁয়া। বোহেমিয়ান টাই আপ ব্লাউজের সঙ্গে স্ট্রেট বয়ফ্রেন্ড প্যান্টে সাহসী লুকও কিন্তু জনপ্রিয় ছিল সত্তরেই। দিন বদলের হাত ধরে আবারও তা ফিরেছে ফ্যাশনে।  (Bohemian tie up blouse with straight boyfriend pants) । তবে আজকের দিনে ফ্যাশনও কিন্তু ঝুঁকছে প্রকৃতির দিকেই। মূলত এথনিকের ক্ষেত্রে যে সব ফ্যাব্রিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য (ethnic wear is heavily tilting towards sustainable fabrics তাই এখন ডিজাইনারদের প্রথম পছন্দ।

ছবি সৌজন্যে- উমাইরা ( দেবরূপা ভট্টাচার্য)

আরও পড়ুন: Floral bikini top:ক্যাট-পুজার মত এমন ফ্লোরাল বিকিনি টপ পরতে পারেন আপনিও! দাম সামান্যই…