Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ধর্মের নামে অত্যাচারের প্রতিবাদেই সারা শরীরে রামের নামের উল্কি আঁকেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ

পেশাগতভাবে এই সম্প্রদায়ের মানুষরা ছিলেন চর্মকার। পশুর চামড়া ছাড়িয়ে তা দিয়ে নানান জিনিসপত্র তৈরি করাই ছিল তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা এই পেশা ছেড়ে চাষবাস, মৃৎশিল্প এবং ধাতুশিল্পকে বেছে নেন জীবনধারণের জন্য।

| Edited By: | Updated on: Oct 06, 2021 | 6:05 PM
সারা শরীরে রামের নাম। শরীরের এমন কোনও জায়গাই খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে নেই রামের নাম! না, কোনও এক ব্যক্তির শরীরের এমন অবস্থা নয়, বরং একটি গোটা সম্প্রদায়ের মানুষের সারা শরীরজুড়ে রাম নামের উল্কি। এমনকী মাথা কামিয়ে সেখানেও লেখা রামের নাম। এঁরা হলেন রামনামী সম্প্রদায়। ছত্তীসগঢ়ের ছাড়পোড়া গ্রামে বাস এই সম্প্রদায়ের। সাধারণত ছত্তীসগঢের রাজগড়, জাঞ্জগির-চম্পা, বিলাসপুর ইত্যাদি জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মহানদীর ধারে ধারেই রামনামীদের গ্রামগুলি দেখতে পাওয়া যায়।  রামনামীদের পুরোর শরীরটাই রামের মন্দির, রামই তাঁদের একমাত্র উপাস্য। মহাকাব্য অনুযায়ী মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম বনবাসের সময় সমাজের অন্ত্যজ গোষ্ঠীর মানুষদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে মর্যাদা দিয়েছিলেন সমাজের পেছিয়ে পড়া মানুষদের। তাই রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষ রামকেই একমাত্র জায়গা দিয়েছেন তাঁদের মনে।

সারা শরীরে রামের নাম। শরীরের এমন কোনও জায়গাই খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে নেই রামের নাম! না, কোনও এক ব্যক্তির শরীরের এমন অবস্থা নয়, বরং একটি গোটা সম্প্রদায়ের মানুষের সারা শরীরজুড়ে রাম নামের উল্কি। এমনকী মাথা কামিয়ে সেখানেও লেখা রামের নাম। এঁরা হলেন রামনামী সম্প্রদায়। ছত্তীসগঢ়ের ছাড়পোড়া গ্রামে বাস এই সম্প্রদায়ের। সাধারণত ছত্তীসগঢের রাজগড়, জাঞ্জগির-চম্পা, বিলাসপুর ইত্যাদি জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মহানদীর ধারে ধারেই রামনামীদের গ্রামগুলি দেখতে পাওয়া যায়। রামনামীদের পুরোর শরীরটাই রামের মন্দির, রামই তাঁদের একমাত্র উপাস্য। মহাকাব্য অনুযায়ী মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম বনবাসের সময় সমাজের অন্ত্যজ গোষ্ঠীর মানুষদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে মর্যাদা দিয়েছিলেন সমাজের পেছিয়ে পড়া মানুষদের। তাই রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষ রামকেই একমাত্র জায়গা দিয়েছেন তাঁদের মনে।

1 / 6
পেশাগতভাবে এই সম্প্রদায়ের মানুষরা ছিলেন চর্মকার। পশুর চামড়া ছাড়িয়ে তা দিয়ে নানান জিনিসপত্র তৈরি করাই ছিল তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা এই পেশা ছেড়ে চাষবাস, মৃৎশিল্প এবং ধাতুশিল্পকে বেছে নেন জীবনধারণের জন্য। হাওয়াই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রামদাস লাম্বের রামনামী সম্প্রদায়ের উপর লেখা আকর গ্রন্থ ‘The Ramnamis Ramnam, and Untouchable Religion in Central India’ অনুযায়ী সমাজের উচ্চবর্ণের হিন্দুরা চিরকাল রামনামীদের সমাজের বাইরেই রেখেছিল। তাদের বাজার ছিল আলাদা, তাদের চলার রাস্তাও ছিল ভিন্ন। এমনকী মন্দিরেও তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি,দেওয়া হয়নি রামায়ণ পাঠেরও অধিকার।

পেশাগতভাবে এই সম্প্রদায়ের মানুষরা ছিলেন চর্মকার। পশুর চামড়া ছাড়িয়ে তা দিয়ে নানান জিনিসপত্র তৈরি করাই ছিল তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা এই পেশা ছেড়ে চাষবাস, মৃৎশিল্প এবং ধাতুশিল্পকে বেছে নেন জীবনধারণের জন্য। হাওয়াই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রামদাস লাম্বের রামনামী সম্প্রদায়ের উপর লেখা আকর গ্রন্থ ‘The Ramnamis Ramnam, and Untouchable Religion in Central India’ অনুযায়ী সমাজের উচ্চবর্ণের হিন্দুরা চিরকাল রামনামীদের সমাজের বাইরেই রেখেছিল। তাদের বাজার ছিল আলাদা, তাদের চলার রাস্তাও ছিল ভিন্ন। এমনকী মন্দিরেও তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি,দেওয়া হয়নি রামায়ণ পাঠেরও অধিকার।

2 / 6
ছত্তিসগঢ়ে গুরু ঘাসিদাস ১৮২০ সাল নাগাদ ‘সতনামী’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন। যার প্রভাবে চর্মকারের পেশা থেকে বেরিয়ে আসেন এই সম্প্রদায়ের মানুষজন। তবে রামনামী সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ ছিলেন পরাশুরাম। সমাজের উচ্চবর্ণের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৮৯০ সালে প্রথম নিজের কপালে রামের নাম খোদাই করেন। পরাশুরামই ছিলেন এই সম্প্রদায়ের পথপ্রদর্শক। তার অনুপ্রেরণাতেই বহু পেছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এই সম্প্রদায়ে নাম লেখান। ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ, বণিক, কুর্মিসহ অন্যান্য জাতির মানুষেরাও যুক্ত হয়ে যান রামনামীদের সঙ্গে।

ছত্তিসগঢ়ে গুরু ঘাসিদাস ১৮২০ সাল নাগাদ ‘সতনামী’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেন। যার প্রভাবে চর্মকারের পেশা থেকে বেরিয়ে আসেন এই সম্প্রদায়ের মানুষজন। তবে রামনামী সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ ছিলেন পরাশুরাম। সমাজের উচ্চবর্ণের অত্যাচারের প্রতিবাদে ১৮৯০ সালে প্রথম নিজের কপালে রামের নাম খোদাই করেন। পরাশুরামই ছিলেন এই সম্প্রদায়ের পথপ্রদর্শক। তার অনুপ্রেরণাতেই বহু পেছিয়ে পড়া গোষ্ঠী এই সম্প্রদায়ে নাম লেখান। ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণ, বণিক, কুর্মিসহ অন্যান্য জাতির মানুষেরাও যুক্ত হয়ে যান রামনামীদের সঙ্গে।

3 / 6
তবে একটি ভিন্ন মতও আছে এই সম্প্রদায়ের মানুষের শরীরে রামের উল্কি আঁকা নিয়ে। কারও কারও মতে উচ্চবর্ণের হিন্দদের হাতে অত্যাচারিত এই মানুষদের মোঘলরা নিজেদের ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছিল। তা থেকে বাঁচতেই তাঁরা নিজেদের সারা শরীরে রামের নাম খোদাই করা শুরু করেন। যদিও রামদাসের মতে, কবীরের ভক্তি আন্দোলনের একটা প্রভাব এদের মধ্যে কাজ করেছিল।

তবে একটি ভিন্ন মতও আছে এই সম্প্রদায়ের মানুষের শরীরে রামের উল্কি আঁকা নিয়ে। কারও কারও মতে উচ্চবর্ণের হিন্দদের হাতে অত্যাচারিত এই মানুষদের মোঘলরা নিজেদের ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে চেয়েছিল। তা থেকে বাঁচতেই তাঁরা নিজেদের সারা শরীরে রামের নাম খোদাই করা শুরু করেন। যদিও রামদাসের মতে, কবীরের ভক্তি আন্দোলনের একটা প্রভাব এদের মধ্যে কাজ করেছিল।

4 / 6
তবে শুধু শরীরেই রামনামের উল্কি আঁকিয়ে ক্ষান্ত দেন না রামভক্ত এই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে কালো রঙে রামনাম লেখার পাশাপাশি শরীরে রামনাম লেখা চাদরও জড়ান তাঁরা।  রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষেরা শুধু শরীরে উল্কি আঁকেন তাই নয়, রামের নামকে এভাবে ব্যবহার করার জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে বর্ণহিন্দুরা এদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই মামলায় জিতে যান রামনামীরাই।

তবে শুধু শরীরেই রামনামের উল্কি আঁকিয়ে ক্ষান্ত দেন না রামভক্ত এই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে কালো রঙে রামনাম লেখার পাশাপাশি শরীরে রামনাম লেখা চাদরও জড়ান তাঁরা। রামনামী সম্প্রদায়ের মানুষেরা শুধু শরীরে উল্কি আঁকেন তাই নয়, রামের নামকে এভাবে ব্যবহার করার জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে বর্ণহিন্দুরা এদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই মামলায় জিতে যান রামনামীরাই।

5 / 6
যেহেতু নিজেদের শরীরটাকেই রামের মন্দির বলে মানেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই এরা নিজেদের পবিত্রতা ধরে রাখতে ধূমপান বা মদ্যপান করেন না। এমনকি তাদের নামের মধ্যেও থাকতে হয় রামের উল্লেখ। এমনকী প্রত্যেকদিন রামের নাম জপ করাও বাধ্যতামূলক। তবে আধুনিককালে সারা শরীরে রামনাম লেখার চল উঠে গেছে এই মানুষদের। তবে এই সম্প্রদায়ের মধ্যএ এখনও যারা সারা শরীরে রামের নাম খোদাই করেন তাদের বলা হয় ‘পুর্ণনাকশিক’।  বর্তমানে পুর্ণনাকশিকদের সকলেরই বয়স ৭০ বছরের বেশি। তবে এখনও এদের মধ্যে চল আছে শিশুর বয়স দু বছর হলে তাদের বুকে রামের নাম এঁকে দেওয়ার। এঁদের গ্রামে প্রার্থনার জন্য থাকে একটি ঘর, আর তাতে রাখা থাকে তুলসিদাসের রামচরিতমানস। এটাই তাদের ধর্মগ্রন্থ, এটিই তাদের বিগ্রহ। বর্তমানে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন গ্রামেও এই রামনামী সম্প্রদায়কে বসবাস করতে দেখা যায়।

যেহেতু নিজেদের শরীরটাকেই রামের মন্দির বলে মানেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই এরা নিজেদের পবিত্রতা ধরে রাখতে ধূমপান বা মদ্যপান করেন না। এমনকি তাদের নামের মধ্যেও থাকতে হয় রামের উল্লেখ। এমনকী প্রত্যেকদিন রামের নাম জপ করাও বাধ্যতামূলক। তবে আধুনিককালে সারা শরীরে রামনাম লেখার চল উঠে গেছে এই মানুষদের। তবে এই সম্প্রদায়ের মধ্যএ এখনও যারা সারা শরীরে রামের নাম খোদাই করেন তাদের বলা হয় ‘পুর্ণনাকশিক’। বর্তমানে পুর্ণনাকশিকদের সকলেরই বয়স ৭০ বছরের বেশি। তবে এখনও এদের মধ্যে চল আছে শিশুর বয়স দু বছর হলে তাদের বুকে রামের নাম এঁকে দেওয়ার। এঁদের গ্রামে প্রার্থনার জন্য থাকে একটি ঘর, আর তাতে রাখা থাকে তুলসিদাসের রামচরিতমানস। এটাই তাদের ধর্মগ্রন্থ, এটিই তাদের বিগ্রহ। বর্তমানে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন গ্রামেও এই রামনামী সম্প্রদায়কে বসবাস করতে দেখা যায়।

6 / 6
Follow Us: