Ghani Khan effect in Malda: ‘গনি-মিথ’, চব্বিশেও কি মালদহে ফ্যাক্টর তিনিই?

Ghani Khan effect in Malda:সমর্থকদের কাছে বরকতদা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন গনি খান চৌধুরী। তাঁকে কেন্দ্র করেই মালদহে নিজেদের জমি শক্ত করে কংগ্রেস। ২০০৬ সালে প্রয়াত হন গনি খান। কিন্তু, প্রয়াণের পরও গনি খানের নামেই মালদহে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করে রাজনৈতিক দলগুলি।

Ghani Khan effect in Malda: 'গনি-মিথ', চব্বিশেও কি মালদহে ফ্যাক্টর তিনিই?
'গনি-মিথ' কি প্রভাব ফেলবে মালদহে?
Follow Us:
| Updated on: May 05, 2024 | 8:07 PM

মালদহ: তিনি প্রয়াত হয়েছেন বছর আঠারো আগে। তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বাংলার মসনদে পালাবদল ঘটেছে। বেশ কয়েকটি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু, মালদহে আজও গনি খান চৌধুরীর নামেই ভোট হয়। এবার কি ‘গনি-মিথ’ শেষ হবে মালদহে? ভোটের ফলাফলে অন্য কোনও ইস্যু প্রধান ভূমিকা নেবে? লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফার নির্বাচনের আগে এই নিয়ে জেলার রাজনীতিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মালদহের সাংসদ ছিলেন তিনি। তার আগে দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন। রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন। সমর্থকদের কাছে বরকতদা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁকে কেন্দ্র করেই মালদহে নিজেদের জমি শক্ত করে কংগ্রেস। ২০০৬ সালে প্রয়াত হন গনি খান। কিন্তু, প্রয়াণের পরও গনি খানের নামেই মালদহে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করে রাজনৈতিক দলগুলি।

গনি খানের বোন রুবি নুর, ভাগ্নি মৌসম নুর, দুই ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী(ডালু), আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) এবং ডালুর পুত্র ঈশা খান চৌধুরী রাজনীতির ময়দানে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর সেইসব নির্বাচনে গনি খানের নামেই ভোট চেয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শুধু কি পরিবারের সদস্য? মালদহে ভোট প্রচারে অন্য দলগুলিকে গনি-আবেগ কাজে লাগাতে দেখা গিয়েছে। গনি খানের প্রয়াণের পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পর্যন্ত মালদহে প্রচারে গিয়ে ‘বরকতদা’কে নিয়ে আবেগকে অস্ত্র করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গনি খানের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চান।

এই খবরটিও পড়ুন

২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর মালদহ আসনটি ভেঙে মালদহ উত্তর ও মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র তৈরি হয়। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গনি পরিবারের সদস্যরাই এই দুই কেন্দ্রে জয়ী হন। মালদহ উত্তরে জয়ী হন মৌসম নুর। আর মালদহ দক্ষিণে জয়ী হন গনি-ভ্রাতা আবু হাসেম খান চৌধুরী।

কিন্তু, উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে গনি খানের পরিবারে ঘাসফুল প্রবেশ করে। মৌসম নুর যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে গনি পরিবারের দুই সদস্য মালদহ উত্তরে প্রার্থী হয়েছিলেন। তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন মৌসম। আর কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন ঈশা খান চৌধুরী। সেই লড়াইয়ে ভোট কাটাকাটিতে বাজিমাত করেন বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু। তিনি পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৯ হাজার ভোট। অন্যদিকে, মৌসম নুর পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ভোট। আর ঈশা খান চৌধুরী পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫ হাজার ভোট।

২০২৪ সালের নির্বাচনে মালদহ উত্তর আসনে গনি পরিবারের কোনও সদস্য প্রার্থী হননি। কংগ্রেস এবার এই আসনে প্রার্থী করেছে মুস্তাক আলমকে। তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বিজেপি প্রার্থী করেছে এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ খগেন মুর্মুকেই।

মালদহ দক্ষিণ আসনটি এখনও কংগ্রেসের দখলে। স্পষ্ট করে বললে, গনি পরিবারের দখলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই আসনে জয়ী হন আবু হাসেম খান চৌধুরি। তবে এবার আর তাঁকে প্রার্থী করেনি কংগ্রেস। গনি পরিবারের সদস্যকেই অবশ্য ভোট ময়দানে তারা নামিয়েছে। ডালুর আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁর পুত্র ঈশা খান চৌধুরী। বিজেপির টিকিটে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। আর তৃণমূল প্রার্থী করেছে শাহনাওয়াজ আলি রায়হানকে।

‘গনি মিথ’ কি এবারও কাজে আসবে কংগ্রেসের?

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, গনি খানের নামে কংগ্রেস মালদহে ভোট পেলেও এখন আর সেই অক্ষুণ্ণ সমর্থন নেই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মালদহ দক্ষিণে মাত্র ৮ হাজার ভোটে জিতেছিলেন আবু হাসেম খান চৌধুরী। এই কেন্দ্রের বিজেপির উত্থান চোখে পড়ার মতো। উনিশের নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোট পান। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ভোট মেরুকরণে সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। মালদহ দক্ষিণে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল কিষাণ জনজাতির মানুষ। নির্দল প্রার্থী কয়েক হাজার ভোট পেয়েছিলেন। না হলে ফলাফল অন্য রকম হতেও পারত বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে মালদহের ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৮টি জিতেছে তৃণমূল। আর বিজেপি পায় ৪টি আসন। গনি-গড় হিসেবে পরিচিত সুজাপুর আসনে জয়ী হয় তৃণমূল।

এবারের নির্বাচনেও গনি খানকে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছে কংগ্রেস। তাদের পোস্টার, ব্যানারে গনি খানের ছবি। কংগ্রেসের দাবি, জেলার মানুষের অন্তরে রয়েছেন গনি খান। এমনকি, ভারতজোড়ো ন্যায় যাত্রায় মালদহে এসে রাহুল গান্ধীও গনি খানের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। আবার তৃণমূলের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নকে মানুষ সমর্থন জানাবেন। মালদহে নিজেদের সংগঠন মজবুত করেছে গেরুয়া শিবিরও। সবমিলিয়ে ‘গনি-মিথ’ চব্বিশের নির্বাচনেও জারি থাকবে, নাকি অন্য কোনও ইস্যু ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলবে, ভোটাররা তাঁদের মতামত জানাবেন ৭ মে। আর ভোটারদের মনের কথা জানা যাবে ৪ জুন। ওইদিন লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা। ততদিন শুধুই অপেক্ষা।