জনপ্রিয় বাউল শিল্পীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে চাঞ্চল্য বাঁকুড়ায়, অভিযোগের তীর শ্বশুরবাড়ির দিকে
Baul Artist Death: সুশীলার বাবা জগন্নাথ দাস বৈরাগী বলেন, 'গতকালই আমার সঙ্গে মেয়ের কথা হয়েছিল। আমাকে দুবার দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ ফোন করেছিল। তখনই জানতে পারি ওর স্বামী, শাশুড়ি আর ননদের সঙ্গে মেয়ের ঝগড়া হয়েছিল। মেয়ে জানিয়েছিল এরা আমাকে শুধু শুধু অপবাদ দিচ্ছে আর মারতে যাচ্ছে। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে জানায় ননদ ময়না ওর নামে বাজে অপবাদ দিয়েছে।
বাঁকুড়া: এক জনপ্রিয় মহিলা বাউল শিল্পীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল বাঁকুড়ার জেলার ইন্দাস থানার ফতেপুর গ্রামে। মৃত ওই বাউল শিল্পীর নাম সুশীলা দাস। রবিবার সকালে ওই বাউল শিল্পীর দগ্ধ মৃতদেহ তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ইন্দাস থানার পুলিশ। মৃতার বাপের বাড়ির অভিযোগ সুশীলাকে পুড়িয়ে মেরেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
সম্প্রতি বাউল শিল্পী হিসেবে যথেষ্ট নামডাক হয়েছিল বাঁকুড়া জেলার ফতেপুর গ্রামের সুশীলা দাসের। একাধিক গানের ক্যাসেটও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর। এ ছাড়াও বাঁকুড়া এবং আশেপাশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও শিল্পী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে প্রায় তেরো বছর আগে সুশীলার বিয়ে হয়েছিল ফতেপুর গ্রামেরই শুভজিৎ দাসের সঙ্গে। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে।
সুশীলার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই শিল্পীর উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করতে শুরু করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। শিল্পীর বাপের বাড়ির দাবি, সুশীলার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদ তাঁকে নানা অপবাদ দিয়ে শারীরিক অত্যাচার চালাত। শনিবার রাতে স্থানীয় সূত্র থেকে খবর পেয়ে সুশীলার বাপের বাড়ির লোকজন তাঁর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয় ওই শিল্পীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। এরপরই খবর আসে শ্বশুরবাড়িতেই আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন সুশীলা। আগুনে আহত হয়েছেন শিল্পীর স্বামী শুভজিৎ দাসও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সুশীলার স্বামীকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। এরপরই সুশীলার বাপের বাড়ির লোকজন দাবি তোলেন তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আভিযোগ দায়ের করে সুশীলার বাপের বাড়ির লোকজন। এরপরই ইন্দাস থানার পুলিশ গিয়ে সুশীলার দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। সুশীলার বাপের বাড়ির দাবি সুশীলার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদ তাঁর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছে তাঁদের মেয়েকে।
সুশীলার বাবা জগন্নাথ দাস বৈরাগী বলেন, ‘গতকালই আমার সঙ্গে মেয়ের কথা হয়েছিল। আমাকে দুবার দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ ফোন করেছিল। তখনই জানতে পারি ওর স্বামী, শাশুড়ি আর ননদের সঙ্গে মেয়ের ঝগড়া হয়েছিল। মেয়ে জানিয়েছিল এরা আমাকে শুধু শুধু অপবাদ দিচ্ছে আর মারতে যাচ্ছে। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করায় মেয়ে জানায় ননদ ময়না ওর নামে বাজে অপবাদ দিয়েছে। আমার মেয়ের ননদ বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর ঘর না করে আমার মেয়ের সংসার নষ্ট করছিল। শনিবার রাত ১১টার সময় জামাই আমাকে ফোন করে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগাল করে, যা মুখে বলার যোগ্য নয়। আমি সাধারণ ঝগড়া ভেবে খুব একটা না বুঝে বাড়িতে শুয়ে পড়ি। বুঝতে পারিনি মেয়েকে ওরা এভাবে মেরে ফেলবে। পরে সাড়ে বারোটা নাগাদ ওর পাশের বাড়ির এক পরিচিত ড্রাইভার আমাকে ফোন করে বলে জেঠু তাড়াতাড়ি মেয়ের খোঁজ খবর নাও। ওর কান্নাকাটি শোনা যাচ্ছে। এরপর আমি মেয়ের ননদকে ফোন করায় সে জানায় বৌদির অবস্থা খুব খারাপ বৌদি বোধহয় বাঁচবে না, দাদার অবস্থাও ভাল নয়। সেই সময় ওই বাড়িতে ওরা তিনজনই ছিল।ওরাই পুড়িয়ে মেরেছে মেয়েকে। আমার মেয়ে শিল্পী মানুষ, দিনরাত তাই নিয়ে ওর সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকত। এলাকার সকলেই জানে আমার মেয়ের দোষ নেই কোনো। এর আগেও ওকে একবাড় পোড়াতে গেছিল। আমার মেয়ে চলে গেছে, কিন্তু ওই তিনজনের যেনো কঠিন শাস্তি হয়।’
সুশীলার এক আত্মীয় মঙ্গলা সাঁতরা বলেন, ‘কাল রাতেরবেলা ফোন আসে সুশীলা অসুস্থ। মেয়ের বাবা মা অসুস্থ থাকায় রাতে যেতে পারেনি। সুশীলার ভাসুর বাইরে গাড়ি চালায়। দেওরও রাতে গাড়ি চালাতে চলে যায়। ওদের বাড়িতে কেউ থাকে না ওর স্বামী, শাশুড়ি ননদ ছাড়া। মেয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর পর জ্বলন্ত অবস্থায় ও স্বামীকে ধরতে যায়। সেই সময় ওরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে বাইরে থেকে শেকল তুলে দেয়। তারপরই আমাদের ফোন করে খবর দেয় তোমাদের মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা চাই ওই তিনজনের যাবজ্জীবন সাজা হোক আর ওদের সম্পত্তি যেনো নাতির নামে করে দেওয়া হয়। সুশীলার বাবা ভিখারি মানুষ, সারাদিন ভিক্ষে না করলে তাঁর হাঁড়ি চাপে না।’ অন্যদিকে সুশীলার শ্বশুরবাড়ির তরফে অভিযুক্তরা সকলেই শুভজিতের চিকিৎসার কারণে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে থাকায় তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ATM fraud: শহরে ফের সক্রিয় এটিএম জালিয়াতের চক্র! পুলিশের হাতে পাকড়াও ১