‘একঘরে’ অধিকারী পুত্র? কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পেশ অনাস্থা
Suvendu Adhikari: ব্যাঙ্ক পরিচালন সমিতির একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে বেআইনিভাবে কর্মী নিয়োগ হয়েছে। বেনিয়মে ঋণ দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে।
পূ্র্ব মেদিনীপুর: রাজ্যের বৃহত্তম কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অধুনা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে ব্যাঙ্ক সচিব পার্থপ্রতিম পতির কাছে চিঠি জমা দিলেন পরিচালন বোর্ডের সদস্যদের একাংশ। তবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অনাস্থা চিঠি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কেউ। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খোদ ব্যাঙ্ক সচিব।
ব্যাঙ্ক সচিব পার্থপ্রতিম পতির কথায়, “একটা চিঠি জমা পড়েছে। তবে কোন বিষয়ে তা এখনও জানিনা। দেখা হয়ে ওঠেনি। বিষয়টা ঠিক কী তা দেখা হচ্ছে।” তবে, ওই চিঠি অনাস্থার কি না তা এখনও স্পষ্ট করেননি ব্যাঙ্ক সচিব। গত ১৪ জুন ব্যাঙ্কের এক শেয়ার হোল্ডার রীণা দাস ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে সরব হন। কাঁথি থানায় তিনি একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। এরপরেই, রাজ্য অর্থ দফতরের তরফে স্পেশাল অডিট শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির একাংশ।
ব্যাঙ্ক পরিচালন সমিতির একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে বেআইনিভাবে কর্মী নিয়োগ হয়েছে।বেনিয়মে ঋণ দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। পাশাপাশি, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উচ্চ পদকর্তা শুভেন্দু (Suvendu Adhikari) ঘনিষ্ঠ রাখাল বেরাকেও সম্প্রতি সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখা থেকে রাখাল বেরা সব নিয়ন্ত্রণ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ও পরবর্তীতে গ্রেফতারির জের এসে পড়েছে ব্য়াঙ্কের ‘গুড উইলে’। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে ব্যাঙ্কের পরিষেবা এমনটাই অভিযোগ পরিচালন মণ্ডলীর একাংশের।
কিছুদিন আগে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ের অভিযোগ তুলে মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি ,প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোর্তিময় কর-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব ব্যাঙ্কের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান। গত ২০ জুলাই মঙ্গলবার, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ঘোষণা করা হলেও ব্যাঙ্ক সচিবের অনুপস্থিতির কারণে সেইদিন কর্মসূচি বাতিল হয়। পরবর্তীতে কবে ফের এই কর্মসূচি পালন হবে তা নিয়ে সন্দিহান বিরোধীরা। পরিচালন মণ্ডলীর একাংশের অনুমান, ইচ্ছে করেই পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে ব্যাঙ্ক সচিব অনাস্থা চিঠির কোনও উত্তর করছেন না। সূত্রের খবর, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রসঙ্গে কেউ কথা না বললেও ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান চিন্তামণি মণ্ডলকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হতে পারে বলে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, চিন্তামণি শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) সঙ্গে চিন্তামণির ‘ঘনিষ্ঠতা’ কিছু কম নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের তৃণমূল ত্যাগের পর থেকেই অধিকারী পুত্রের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয়েছে ক্ষোভ। কিছুদিন আগেই তাম্রলিপ্ত জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন শুভেন্দু। এ বার, সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকেও অপসারণের দাবি তোলার নেপথ্যে এই ক্ষোভ কাজ করছে বলেই অনুমান বিশ্লেষকদের। পাশাপাশি, চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হয়ে ‘স্বঘনিষ্ঠ’ চিন্তামণিকে চেয়ারম্যান করতে চাওয়ার নেপথ্যে আসলে অধিকারী পুত্রেরই পরোক্ষ নির্দেশ রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। এর ফলে, পদ না থাকলেও কার্যত অঙ্গুলিহেলনের দায়িত্ব যে শুভেন্দু স্বহস্তে নেবেন এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে তৃণমূলের তরফে তমলুকের সাংসদ নির্বাচত হন শুভেন্দু অধিকারী। এরপর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানও হন তিনি। বিধানসভা নির্বাচন আবহে দল ও পদত্যাগ করলেও সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ ছাড়েননি শুভেন্দু। গত ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন নন্দীগ্রামের অধুনা বিজেপি বিধায়ক। আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: কেবলই কি শহিদ স্মৃতি? নাকি ২১ জুলাইয়ে লুকিয়েছিল তৃণমূল তৈরির বীজও