Fisherman trouble: ব্যাঙ্ক ঋণ,পুলিশি অত্যাচার, ব্যবসায় মন্দা! প্রশাসনের কাছে ‘স্বেচ্ছা মৃত্যু’ চাইছে মৎস্যজীবীরা

Purba medinipur fisher man probelm: পুলিশ প্রশাসন এই নির্দেশের ফলে কপালে ভাঁজ মৎস্য ব্যবসায়ীদের। কী করে সংসার চালাবেন সেই দুশ্চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর।

Fisherman trouble: ব্যাঙ্ক ঋণ,পুলিশি অত্যাচার, ব্যবসায় মন্দা! প্রশাসনের কাছে 'স্বেচ্ছা মৃত্যু' চাইছে মৎস্যজীবীরা
সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 28, 2022 | 8:39 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্যে বড় শিল্প না হলেও ছোট ছোট আকারে কর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে মাত্রা নিয়ে যখন কাজে এগোচ্ছে সরকার, তখনই এক অন্য সমস্যা তৈরি হল। সরকারের নির্দেশে নয়াচরে হতে চলেছে ফিশিং হাব। সেই নয়াচরেই চরম আশঙ্কাতে দিন কাটাচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। রীতিমত জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।

কীসের সমস্যা?

হলদিয়া মহাকুমার (Haldia) অন্তর্গত নয়াচর এলাকায় কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর বাস। প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে মৎস্য চাষ হয় এই দ্বীপে। বলা যায়, বারো মাস প্রাণ হাতে করে এই অঞ্চলে মাছ চাষ করেন মৎস্য চাষীরা। মাছ চাষ পূর্ব মেদিনীপুরের অর্থকরী ব্যবসা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। কিন্তু এখানকার মৎস্য চাষীদের দাবি , আমফান, ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের ফলে মাছ চাষের ব্যাপক ভাবে ক্ষতি হয়েছে। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন তাঁরা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে তারা নিঃস্ব হতে বসেছেন। এই অবস্থায় তাঁদের প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভেড়িগুলি মাটি কাটা মেশিনের মাধ্যমে মেরামত করছিলেন। এখন এই মেশিনের মাধ্যমে ভেড়ি মেরামত করতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইতিমধ্যেই পুলিশ ৫ টি মাটি কাটার মেশিন বাজেয়াপ্ত করেছে। নয়াচরে মাটি কাটা মেশিন দিয়ে কোনও কাজ করার অনুমতি দিচ্ছেন না জেলা পুলিশ প্রশাসন।

এদিকে নিজেদের ভেড়ি মেরামত করতে না পারলে আগামী মরশুমে করতে পারবেন না মাছ চাষ। মিটবে কী করে মহাজন দেনা? সেই নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে নয়াচরে প্রায় ১০ হাজার মাছ চাষী। বেগতিক দেখে শেষমেশ জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। লিখিতভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতির জন্য আবেদন করেছে তারা ।

হলদিয়া মহকুমার নন্দীগ্রাম-হলদিয়া সুতাহাটা এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার অনেক বাসিন্দারা এখানে এসে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুলিশ প্রশাসন এই নির্দেশের ফলে কপালে ভাঁজ মৎস্য ব্যবসায়ীদের। কী করে সংসার চালাবেন সেই দুশ্চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর।

তপন প্রামাণিক মৎস্যজীবী বলেন, “২০০৭ সাল থেকে মাছ চাষ করছি আমরা নয়াচরে। কোনওদিন পুলিশ মাছ চাষে বাধা দেয়নি এ বছরই প্রথম। জলোচ্ছ্বাসের ফলে মোটা টাকা লোকসানের মুখে আমরা। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মহাজন টাকা শোধ করতে পারেনি। এখন ভেড়ি গুলি মেরামত না করতে পারলে আগামী মরসুমে মাছ চাষ করতে পারব না। ফলে বাড়বে মহাজন সুদের পরিমাণ। শেষে সমস্যা বুঝে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছি। ভেড়ি মেরামত না করতে দিলে পরিবার নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছি। ”

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার নয়াচর নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অত্রি ভট্টাচার্য্য। রাজ্য প্রশাসন নয়াচরের ভূমির কোনও পরিবর্তন করতে চাইছে না। এখন ভেড়ির যেমন অবস্থায় আছে তেমন অবস্থায় রেখে দিতে চাইছেন রাজ্য সরকার। যা নিয়ে খুব শিগগিরই নির্দেশিকা জারি হবে।

ঘটনার বিষয়ে রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন,  “এত দিন কেন্দ্র সরকারের হাতে ছিল নয়াচরের জমি তাই রাজ্য কিছু করতে পারছিল না। এখন রাজ্যের হাতে জমি তাই আমরা ওইখানে ফিসিং হাব ও ইকো টুরিজিম গড়ে কর্মসংস্থান ব্যাবস্থা করছি। আর ওইখানে কোনও মৎস্যজীবীকে আমার উচ্ছেদ করবো না।ওদেরকে নিয়ে সব কাজ হবে ফলে চিন্তার কারণ নেই।”

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশীষ শ্যামলের দাবি, জেলা প্রশাসন এই বিষয়টিকে নিয়ে একটু স্পর্শ কাতর ভাবেই বিবেচনা করলেই ভালো হয়। কারণ মৎস্যজীবীরা সর্ব ক্ষেত্রেই অবহেলিত। রাজ্যে সরকার,মৎস্য মন্ত্রী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ যদি একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখে তা হলে বুঝবে কতটা ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর জন্য তারা আবেদন বা নিবেদন করছেন।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি বলেন, “একটা আবেদন জমা পড়েছে দেখা হচ্ছে বিষয়টা”

আরও পড়ুন: West Bengal Police: বড় ধাক্কা! অস্বচ্ছতার দায়ে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের গোটা প্যানেলই বাতিল