Explained, DeepSeek R1 AI: ডিপসিক কী? চিনা AI-এ কেন কাঁপছে আমেরিকা? ভারতে কী প্রভাব?

Chinese AI: চিনের একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ডিপসিক মাত্র ১ সপ্তাহ আগেই লঞ্চ করেছে R1 নামক তাদের একটি এআই মডেল। আর তার ধাক্কায় হাহাকার ওয়াল স্ট্রিটে। তবে কি AI-এর যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে চিন? টেক অ্যানালিস্টরা বলছেন ডিপসিক R1 চ্যাট জিপিটির মতো একই লেভেলের পারফর্ম করছে।

Explained, DeepSeek R1 AI: ডিপসিক কী? চিনা AI-এ কেন কাঁপছে আমেরিকা? ভারতে কী প্রভাব?
Follow Us:
| Updated on: Jan 29, 2025 | 10:22 PM

ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি, সর্বত্র নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করার পর এবার ড্রাগনের দেশের নজরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। চিনের একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ডিপসিক মাত্র ১ সপ্তাহ আগেই লঞ্চ করেছে R1 নামক তাদের একটি এআই মডেল। চিনা হেজ ফান্ড সংস্থা হাই ফ্লায়ারের মালিকানাধীন এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মটির কারণে ধাক্কা খেয়েছে সিলিকন ভ্যালি, গত দু-এক দিনে গোটা বিশ্বের নজর নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে এই ডিপসিক।

শেয়ার বাজার থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেল কয়েক বিলিয়ন ডলার!

২৪ জানুয়ারি শুক্রবার বাজার বন্ধের সময় S&P 500 সূচক ৬,১০০ পয়েন্টে বন্ধ হয়। সেই সূচক ২৭ জানুয়ারি সকালে খোলে ৫,৯৬৯ পয়েন্টে, যা প্রায় ২.১৬ শতাংশ পতন। দিনের শেষে দেখা যায় সামান্য রিকভার করলেও আগের দিনের তুলনায় বাজার প্রায় ১.৭ শতাংশ নীচে অবস্থান করছে। আর এর কারণেই, গত ১ মাসের সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা দিন ২৭ জানুয়ারি।

আমেরিকার আর এক সূচক নাসড্যাক পড়ে যায় প্রায় ২.৮ শতাংশ। জেনারেটিভ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে শক্তি দেয় এমন সেমি কন্ডাক্টার উৎপাদনে একচেটিয়ে বাজার দখল করে রয়েছে এনভিডিয়া। আর ডিপসিকের ধাক্কায় সেই এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম পড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এতে বাজার থেকে তাদের প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সূচক যাড়া টেকনোলজির উপর ততটাও নির্ভরশীল নয়, ২৭ জানুয়ারি তাদের সূচক পড়েছে মাত্র ৫৪ পয়েন্ট বা ০.১ শতাংশ।

চিনা এই সংস্থা দাবি করে তারা আমেরিকার সংস্থাগুলোর তুলনায় অনেক স্বল্পমূল্যে একটি বৃহৎ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরি করেছে। আর এরপরই ডিপসিকের অ্যাপ খুবই দ্রুত অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরের ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের তালিকায় উপরের দিকে চলে আসে। আমেরিকার একাধিক ক্ষেত্রে চিনা আগ্রাসনের উপর তৈরি হওয়া নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে বাজার বিশেষজ্ঞরা।

AI স্টকের জন্য খারাপ সময়

এআই সংক্রান্ত শেয়ারগুলোর একটা বুম গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ডিপসিকের এই ঘটনা যেন ঠিক তার বিপরীতমুখী একটা সংকেত দিল। যেমন এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম মাত্র দু’বছরেরও কম সময়ে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এই হাইপ থেকে লাভবান হয়েছিলও মেটার মতো সংস্থাও।

অ্যালফাবেট (গুগলের পেরেন্ট কোম্পানি), অ্যামাজন, অ্যাপেল, মেটা, মাইক্রসফট, এনভিডিয়া ও টেসলা যারা একত্রে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ নামে পরিচিত, তাদের কারণে একটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছিলও বাজারে। কারণ, এই ৭ সংস্থাই S&P 500 সূচকের মোট রিটার্নের অর্ধেকের বেশি রিটার্ন পেয়েছিল। আর এই ধরণের ঝুঁকি ডিপসিকের উত্থানের মতো ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

ডিপসিক অন্য এআই সংস্থাদের থেকে আলাদা কেন?

জানা যাচ্ছে, এত কম সময়ে এই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলার পরও নাকি ডিপসিকের এই এআই মডেল বাণিজ্যিকীকরণ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। পরিবর্তে তারা শুধুই রিসার্চে ফোকাস করতে চায়। অন্যদিকে, ডিপসিক তাদের খরচের জন্য বাইদু, আলিবাবা বা বাইটড্যান্সের মতো বড় বড় তেক জায়ান্টের উপর নির্ভর করে না। হেজ-ফান্ড সংস্থা হাই ফ্লায়ারই শুধুমাত্র রয়েছে এদের পিছনে। আমেরিকানপ বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের রিপোর্ট অনুযায়ী ডিপসিকের সঙ্গে চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা AMD-র একটি চুক্তি রয়েছে। আর সেই কারণেই AMD-র জিপিইউ (GPU) ও আরওসিএম (ROCM) সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের আর এক এআই মডেল ডিপসিক-V3-তে।

AI ও প্রযুক্তি জগতে কেন ঝড় তুলল ডিপসিক?

সিলিকন ভ্যালি ও আমেরিকার সরকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার অস্তিত্বগত প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ডিপসিকের এই এআই মডেলের উত্থান এবং তার সাফল্য। আমেরিকার বড় বড় টেক সংস্থাগুলো মনে করে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে। কারণ, বিশাল মূলধনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা প্রথমসারির প্রতিভাদের তুলে আনতে পারে। বা বিরাট বিরাট ডেটা সেন্টার তৈরির জন্য বিপুল বিনিয়োগ করে অত্যন্ত ব্যায়বহুল ও হাই-এন্ড চিপ কেনার ক্ষমতাও রাখে তারা।

মার্কেট অ্যানালিসিস নিউজলেটার ‘দ্য কোবেইসি লেটার’-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডাম কোবেইসি X মাধ্যমে লিখেছেন, ‘১০ বছর আগে ওপেন এআই প্রতিষ্ঠা হয়েছিলও, বর্তমানে তাদের কর্মী সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০ এবং তারা বাজার থেকে মোট ৬.৬ বিলিয়ন ডলার তুলেছে মূলধন হিসাবে। অন্যদিকে, ডিপসিকের প্রতিষ্ঠা হয় মাত্র ২ বছর আগে। মাত্র ২০০ কর্মী সেখানে কাজ করেন ও বাজার থেকে তারা এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে মূলধন হিসাবে”। এতদিন মনে করা হত এআই সংক্রান্ত রিসার্চ বা এমন একটা সংস্থা চালাতে কোটি কোটি টাকা লাগে। আর এই ধারণায় সমূলে আঘাত করেছে ডিপসিক।

তবে কি AI-এর যুদ্ধে জিতে যাচ্ছে চিন? এক কথায় বললে বলা যায়, এখনই এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। যদিও টেক অ্যানালিস্টরা বলছেন ডিপসিক R1 চ্যাট জিপিটির মতো একই লেভেলের পারফর্ম করছে। ওপেন AI-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানুয়ারির শুরুর দিকে বলেছিলেন এই মাসের মধ্যেই তাঁর সংস্থা তাদের অত্যাধুনিক এআই মডেল 03 মিনি প্রকাশ করবে। গত সোমবার, ২৭ তারিখের ঘটনার পর প্রতিক্রিয়ায় স্যাম অল্টম্যান ডিপসিককে ‘ইম্প্রেসিভ’ বলেছেন। এবং ডিপসিককে তাঁর ‘প্রতিযোগী’ ঘোষণা করে আশা করেছেন ভবিষ্যতে আরও ভাল মডেল তৈরি করবে তাঁর সংস্থা।