Rare Genetic Disease: চিকিৎসায় সারে না, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধ লাগে এই বিরল রোগে

একটা বড় স্পেকট্রাম জুড়ে হয় এই বিরল রোগের চিকিৎসা। আর সেই স্পেকট্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তার প্রতিটিই ব্যয়বহুল।

Rare Genetic Disease: চিকিৎসায় সারে না, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ওষুধ লাগে এই বিরল রোগে
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 03, 2021 | 5:25 PM

নন্দন পাল

দেবস্মিতা ঘোষ স্বপ্ন দেখে যে ও নভোশ্চর হবে। মহাকাশের রহস্য ওকে টানে। একই ভাবে টানে শীর্ষেন্দুর মুখোপাধ্যায়ের কিশোর উপন্যাস। পড়াশোনায় দারুন মেধাবী এগারো বছরের মিষ্টি বালিকাকে সমস্ত দৈনিন্দিন কাজের জন্য সহায়তা নিতে হয় অন্য কারও। স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোপি বা এসএমএর কারনে ওদের অনেকের শিরদাঁড়া বেঁকে যায়। হাত আর পায়ের পেশিতে জোর ক্রমশ কমতে থাকে। কারও কারও মাথা ঘাড়ের একদিকে কাত হয়ে যায়। মাথাটাকে সোজা রাখতেও পারে না তারা। আর বুকে হাড়ের খাঁচায় ক্রমাগত চাপ পড়তে থাকায় শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয় ওদের।

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোপি কী?

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোপি একটি প্রগ্রেসিভ নিউরো মাসকুলার ডিজঅর্ডার (Progressive Neuromuscular Disorder)। রোগীর নিউরন ঠিকঠাক কাজ করেনা, নিউরন শুকিয়ে যাওয়ার ফলে মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে বা কাজ করেনা। জন্মের সময়ে এই রোগের লক্ষণগুলো যেহেতু বোঝা যায় না তাই রোগ নির্ণয় একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে সেরিব্রাল পলিসি বা অন্যান্য প্যারালাইসিসের কোনও যোগ নেই। এসএমএ চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সারে না। চিকিৎসা রোগটাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র।

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোপির চারটি পর্যায় আছে –

টাইপ ১ বয়স ২ বছর পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় লক্ষণ – শিশু ওল্টায় না – শিশুর শরীর অত্যধিক নরম – শিশুর ঘাড় শক্ত হয় না – শিশু উঠে বসতে পারে না

টাইপ ২ বয়স ৩ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় লক্ষণ – শিশু হাঁটা চলা শুরু করবার পর হঠাৎ ব্যালান্স চলে যায় – শিশু হাঁটতে গিয়ে পড়ে যায় – শিশু হামা দেয়, কিন্তু হাঁটে না

টাইপ ৩ বয়স ৬ বছর থেকে ৮ বছর পর্যন্ত ছোটদের মধ্যে দেখা যায় লক্ষণ – সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পর হঠাৎ দেখা দেয় রোগের লক্ষণগুলো – সাইকেল চালাতে কিংবা হাঁটতে চলতে অসুবিধা হয়।

টাইপ ৪ বয়স ১৮ বছর বা কলেজে যাওয়ার সময় দেখা দেয় লক্ষণ গুলো। লক্ষণ – রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে – রোগীর হাঁটা চলায় অসুবিধা হয় – ক্রমশ হুইল চেয়ারে বন্দি হয়ে পড়ে রোগী

চিকিৎসা শাস্ত্রের ১০টি বিভাগ এই রোগের ম্যানেজমেন্টে একসঙ্গে কাজ করে। এরফলে রোগটাকে রোগটা সম্পূর্ণ সারে না তবে রোগীর কষ্ট কিছুটা কমে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে যে বিভাগ এই রোগের মাল্টি নোডাল থেরাপি দেয় তা হল।

পেডিয়াট্রিক্স বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিউরো ডেভলপমেন্ট পেডিয়াট্রিক্স নিওন্যাটোলজি পালমোনোলজি নিউরোলজি ফিজিওথেরাপি অকুপেশানাল থেরাপি অর্থোটিস্ট প্রস্থেটিস্ট স্পাইন সার্জেন

একটা বড় স্পেকট্রাম জুড়ে হয় এই বিরল রোগের চিকিৎসা। আর সেই স্পেকট্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তার প্রতিটিই ব্যয়বহুল। একসঙ্গে ১০টি বিভাগের চিকিৎসকদের পাওয়াও মুশকিল হয় রোগীর পরিবারদের ক্ষেত্রে। এই সমস্যা থেকে রোগীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছে পিয়ারলেস হাসপাতাল ও অভিভাবকদের সংগঠন। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ওই হাসপাতালে হচ্ছে এসএমএ ক্লিনিক।

এই রোগে আক্রান্তরা ধীরে ধীরে হুইল চেয়ারে বন্দি হয়ে পড়ে। শিরদাঁড়া এক দিকে বেঁকে যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় একে বলা হয় স্কোলিওসিস (Scoliosis) এসএমএ রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত হয় স্কোলিওসিস। তারফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এই রোগে আক্রান্তদের। আর শিরদাঁড়া বেঁকে যাওয়ার থোরাসিক কেজ বা বুকের খাঁচায় ক্রমাগত চাপ পড়ে। এরফলে এসএমএ আক্রান্তরা প্রায়ই সর্দি কাশি বা শ্বাস জনিত অন্যান্য রোগে ভুগতে থাকে। যখন শিরদাঁড়ার স্কোলিওসিস মাত্রাতিরিক্ত হয় তখন প্রয়োজন হয় শিরদাঁড়ার অস্ত্রোপচার (Spine Surgery)। ফিজিওথেরাপি এসএমএ রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপির ফলে ছোট ছোট সাফল্য আসে রোগীর মধ্যে। যে সাফল্য গুলো উৎসাহ যোগায়। ওদের ক্ষেত্রে মাথায় দুটো হাত ছোঁয়ানো, হ্যান্ডসেক করা, কোনও জিনিস গ্রিপ করে ধরতে পারা, পাশ ফেরা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যায় চিকিৎসা।

কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার লড়াই

দেশে ৫৫০ আর রাজ্যে ৫০ জন আক্রান্ত এই রোগে। কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া (Cure SMA Foundation of India) সরকার ও ফার্মা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কমপ্যাশনেট প্রোগ্রাম (Compassionate Program) ও হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাকসেস প্রোগ্রমে (Humanitarian Access Program) এই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ওষুধ স্পিনরাজা (Spinraza – Nusinersen) এবং রিজডিপ্লাম (Risdiplam) পাচ্ছে অসুস্থ শিশুরা। একই সঙ্গে দেশে অননুমোদিত কিন্তু ৩য় পর্যায়ের ট্রায়াল (3rd Phase Trial) উত্তীর্ন ওষুধ গুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিজিসিএ (DGCA) র অনুমোদন পেতে ও আইনি জটিলতা কাটাতেও তদ্বির করে ওই অভিভাবকদের সংগঠন। সারা দেশের ২২ জন চিকিৎসককে তাদের পাশে পেয়ে কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া তৈরী করেছে একটি এসএমএ টাস্ক ফোর্স। এই টাস্ক ফোর্সের কারনে সারা দেশে বেশ কিছু রোগী বিনামূল্যে পাচ্ছেন ওষুধ। রোগীদের অভিভাবকদের এই সংস্থা আক্রান্তদের প্রতিদিনের সুবিধা অসুবিধার খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি যে সমস্ত শিশু ও কিশোর কিশোরী আক্রান্ত তাদের প্রতিভা খুঁজে বার করে তাদের আঁকা ছবি সম্বলিত ২০২১ এর একটি ক্যালেন্ডারও প্রকাশ করেছে ওই ফাউন্ডেশন।

কত খরচ চিকিৎসায় ?

এসএমএর জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর নোভার্টিসের জিন থেরাপি যা রোগীর ২ বছর বয়সের মধ্যে দিতে হয় একবার প্রয়োগে দারুন সাফল্য আসে এই ওষুধে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই ওষুধের দাম ১৬ কোটি এছাড়াও রয়েছে নুসিনার্সিন গ্ৰুপের একটি ইনজেকশন, স্পিনরাজা। ২০২০ তে বাজারে আসে একটি ওরাল ড্রাগ নাম রিজডিপ্লাম। এই স্পিনরাজা এবং রিজডিপ্লাম চালাতে হয় আজীবন। একজন রোগী যিনি ওরাল ড্রাগ রিজডিপ্লাম নেন তাঁর বছরে ওষুধ বাবদ খরচ হয় ৭৪ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা। এর ওপর আছে বাইপ্যাপ পরিষেবা , হাসপাতালে ভর্তি হবার খরচ এবং ফিজিওথেরাপি ,অর্থোটিস্ট ও প্রসথেটিস্টের খরচ। সব মিলিয়ে মাসে এক জন রোগীর জন্য খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে আর অন্য বিরল রোগের মতই এসএমএ রোগীরা অন্তর্ভুক্ত নন স্বাস্থ্যবীমার। যারফলে এসএমএ আক্রান্তদের অভিভাবকদের পরিস্থিতি হয় দুর্বিষহ। কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার থেকে পাওয়া একটি তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের কোনও রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেই এই জেনেটিক বিরল রোগের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক শুরু করেছে বিরল রোগের জন্য ‘নিরাময়’ বীমা, কিন্তু সেই বীমার পরিমান ১ লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুন: World Heart Day 2021: হার্টের যে কোনও সমস্যাকে বাই-বাই বলতে এই ৫ সহজ ওয়ার্কআউট করুন!

আরও পড়ুন: Benefits of Shankh Blowing: শাঁখ বাজানোর কারণ শুধু আধ্যত্মিক নয়, এর অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতাও রয়েছে…