হুগলি: ঠিক এই স্কুলেরই প্রাইমারি সেকশনে পড়েছিলেন। প্রথম তিন জনের মধ্যেও থাকতেন। তিনিই আজ বাংলার এক জন বিধায়ক। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তাঁর ছেলেবেলার সেই স্কুলই এখন শিক্ষক-হীনতায় ভুগছে। স্কুলের জন্ম লগ্ন থেকেই নেই কোনও ইংরাজি এবং ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক। গত কুড়ি বছর ধরে স্কুলে নেই গ্রূপ ডি-র কর্মী এবং অঙ্কের শিক্ষকও। ফুরফুরা পঞ্চায়েত এলাকার রাম পাড়া নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার হাল দেখতে গেলেন ভাঙরের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এই স্কুলেই চুতুর্থ শ্রেণি পযন্ত পড়াশোনা করেছিলেন ভাঙরের বিধায়ক নওশাদ। শুক্রবার সকাল এগারটা নাগাদ স্কুলে যান তিনি এবং স্কুলের অসুবিধার কথা শোনেন প্রধান শিক্ষিকার কাছে। স্কুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন একজন। তিনি অবসর নেওয়ার পর আজও নিয়োগ করা হয়নি কোনও অঙ্কের শিক্ষক। অন্যদিকে গত কুড়ি বছর ধরে স্কুলে নেই কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী।
বর্তমানে ঝাঁ চকচকে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরা পঞ্চায়েত এলাকার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার চরম দুর্দশা ঘুরে দেখলেন বিধায়ক নওশাদ। স্কুলটি পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুধু ছাত্রীরাই পড়ে। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত এই স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা ছিল সাড়ে ছ’শর উপর। তারপর কমতে শুরু করে ছাত্রী সংখ্যা। বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ৪৫২ জন। শিক্ষিকা মাত্র ৮ জন। এই স্কুলে অঙ্ক, ভৌত বিজ্ঞান এবং ইংরাজি শিক্ষিকা না থাকার কারণে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। যদিও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষিকারা স্কুল বাঁচাতে বাধ্য হয়ে নিচ্ছেন অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান এবং ইংরাজির ক্লাস।
অভিভাবকদের দাবি, সামর্থ্য নেই গৃহশিক্ষক দেওয়ার। স্কুলে যা পড়ে, তাই আবার বাড়িতে গিয়ে ভালভাবে ঝালিয়ে নেয় তাঁদের সন্তানরা। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
গত বছর এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল ৮২ জন ছাত্রী তার মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছিল ২৫ জন ছাত্রী। এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছে মাত্র ৪২ জন ছাত্রী। সব দায় এসে পড়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার উপর। শিক্ষকতার পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজটাও তাঁকেই করতে হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা। অন্যান্য শিক্ষিকারাও তাঁকে সাহায্য করেন।
বার বার এস আই, ডিআই সহ শিক্ষা দফতরে আবেদন জানিয়েও মেলেনি কোনও ফল অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকার। যদিও এ বিষয়ে জাঙ্গিপাড়া ব্লকের স্কল পরিদর্শক দীপঙ্কর সরকার বলেন, “নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ে যথেষ্ট শিক্ষক রয়েছে। শুধু গ্রুপ ডি কর্মী নেই। হুগলির বহু স্কুলেই শিক্ষক নেই। বাকি যা বলার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।”
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “অন্য এলাকার বিধায়ক আজ স্কুলে আসায় অত্যন্ত খুশি আমরা। স্কুলের খবর নেওয়ার জন্য নওশাদ সিদ্দিকিকে ধন্যবাদ জানাই।” নওশাদ বলেন, ” আমি তো ছেলেবেলায় এই স্কুলেই পড়েছি। স্কুলের সঙ্গে নাড়ির টান। আমার পরিবারের একাধিক সদস্য এই স্কুলে পড়েছে। কয়েকদিন আগে শুনলাম এই স্কুলে শিক্ষক নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। কোথায় কোথায় চিঠি হয়েছে, তার কপি চেয়েছি। আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”