Teachers Day 2021: আমার আর কালিকাপ্রসাদের মধ্যে শিক্ষার আদান-প্রদান চলতেই থাকত…: ঋতচেতা গোস্বামী

TV9 Bangla Digital | Edited By: স্বরলিপি ভট্টাচার্য

Sep 17, 2021 | 11:12 PM

Teachers Day 2021: করোনা কালে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ভার্চুয়াল ডাইমেনশন দেখেছে পৃথিবী। কেমন সেই আয়না? ব্যাখ্যা করলেন দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষিকা ঋতচেতা গোস্বামী। ব্যক্তিগত সম্পর্কে যিনি প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্ত্রী।

Teachers Day 2021: আমার আর কালিকাপ্রসাদের মধ্যে শিক্ষার আদান-প্রদান চলতেই থাকত...: ঋতচেতা গোস্বামী

Follow Us

শিক্ষক দিবস। ক্যালেন্ডার মেনে ৫ সেপ্টেম্বর হাজির। ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ বা ‘উপস্থিত’ বলার ধরন বদলে দিয়েছে কোভিড। করোনা কালে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ভার্চুয়াল ডাইমেনশন দেখেছে পৃথিবী। কেমন সেই আয়না? ব্যাখ্যা করলেন দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের শিক্ষিকা ঋতচেতা গোস্বামী। ব্যক্তিগত সম্পর্কে যিনি প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্ত্রী।

১৪ বছর ধরে দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশনে পড়াচ্ছি আমি। পড়ানোর আগে অবশ্য আকাশবাণীতে কাজ করেছি। নিউড রিডিং, অ্যাঙ্কারিং করেছি। ২০০৫ থেকে পড়াচ্ছি আমি। করোনার আগে পরিস্থিতি এক রকম ছিল। আর এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকার আদান-প্রদানের বিষয়টা পুরোটাই ভার্চুয়াল।

স্কুলে বেশিরভাগ স্টুডেন্টই একেবারে ছোট থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত পড়ে। প্রায় ১৪, ১৫ বছর তারা এই পরিবেশে কাটায়। তার একটা প্রভাব থাকে। তার ফলেই অতিরিক্ত আন্তরিকতা তৈরি হয়ে যায়। আমাদের বাচ্চারা আমাদের ন্যাওটা হয়ে যায়। অনেক স্টুডেন্ট আছে, যারা পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছে, শহরের বাইরে হয়তো থাকে, কলকাতায় ফিরলে স্কুলে আসে, খোঁজ করে, দেখা করে, এই ব্যাপারটা রয়েছে। বাচ্চারা কেউ আমাকে ছেড়ে যায়নি। শুধু আমি নই, আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগে স্টুডেন্টের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ রয়ে গিয়েছে। অনেক সময় ওদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ থেকে গিয়েছে। শীতে, ডিসেম্বর মাসে স্কুলে একটা মেলা হয়। তখন অ্যানুয়াল প্রোগামও হয়। ওই সময় হয়তো অনেক পুরনো স্টুডেন্ট দেশে ফিরেছে, তারা চলে আসে। বাবা, মায়েদের, পরিবারের অন্যদেরও নিয়ে আসে।

আমি ক্লাস এইট থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত পড়াই। ছোট থেকে আমাকে দেখছে কিছু বাচ্চা। প্যানডেমিকে যাদের ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ তারা তো আমাকে আগে দেখেছে। কিন্তু প্যানডেমিকে যারা এইটে উঠল, প্রথম পেলাম যাদের, তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালিই পরিচয় হল আমার। ভাব কম জমল এমন নয়। আলাপ-পরিচয় প্রায় একই রকম হল। স্কুলে থাকলেও কিছু বাচ্চা ভীষণ মনোযোগী, ভীষণ মন দিয়ে পড়াশোনা করে, তারা ভার্চুয়ালিও করছে। কিন্তু ওরা সকলেই যেটা মিস করছে, সেটা হল, আমরা স্কুলে নানা রকম অ্যাকটিভিটি করাই। ভার্চুয়ালিও চেষ্টা করেছি। ওরা ওই উষ্ণতাটা কম পেল। আমরাও ভীষণ মিস করলাম। যে কোনও অনুষ্ঠানের আগে রিহার্সাল, ইন্টার-স্কুল কম্পিটিশন, এগুলো তো শিক্ষার বড় জায়গা। ভার্চুয়ালি বই পড়া শিক্ষাটা হল হয়তো, কিন্তু সেটা ছাড়া যে বড় জগৎ, সেটা মিস করল ওরা। আমরাও মিস করলাম।

ভার্চুয়াল ক্লাসে টিচারের দিক থেকে ফাঁকি দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। কারণ আগের মতোই লেসন প্ল্যান তৈরি করা, নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করানো, অ্যাসেসমেন্ট নেওয়া, এগুলো আমাদের ফলো করে যেতে হয়েছে। স্টুডেন্টদের দিক থেকে কিছু ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ে। এখনকার বাচ্চারা অনেক বেশি টেক-স্যাভি। ইন্টারনেটের নেশা তো ওদের আগে থেকেই ছিল। এখন ক্লাসে থাকছে হয়তো ভিডিয়ো অফ করে বসে রয়েছে। পড়া ধরলে সাড়া দিচ্ছে না। মৌখিক কিছু ধরলে ডিসকানেকটেড হয়ে যাচ্ছে। বলছে, নেটওয়ার্ক খারাপ। অডিও বন্ধ করে দিচ্ছে। এই দুষ্টুমিগুলো করছে। হঠাৎ মনে হল হয়তো, ওই বাচ্চাটা তো অনেকক্ষণ সাড়া দিচ্ছে না। নাম ধরে ডাকছি হয়তো। দেখছি নেই। পেরেন্ট-টিচার মিটিংয়ে বোঝা যাচ্ছে, হয়তো ক্লাসে বসে সেই স্টুডেন্ট ভিডিয়ো গেম খেলেছে। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নেট সংক্রান্ত অ্যাডিকশনও চলে আসছে ওদের মধ্যে। যদিও বাচ্চাদের বলা হয়েছে, যতক্ষণ ক্লাস চলবে ততক্ষণ ভিডিয়ো যেন অন থাকে। অভিভাবকদেরও বলা হয়েছে, ইন্টারনেট কানেকশন যাঁদের কমজোরি, তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে আপডেট করে নিন, যাতে ক্লাস করতে সুবিধে হয় ওদের। আমরা যতটা সম্ভব ক্লাস ইন্টারঅ্যাকটিভ করার চেষ্টা করেছি। যাতে ওরা কথা বলে। মনোযোগ দিতে পারে।

প্রসাদের সঙ্গে (সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য) আলাদা করে বাড়িতে পড়ানো নিয়ে যে কখনও আলোচনা করেছি, এমন নয়। তবে আমার কোনও পড়ানোর বিষয়, কিছু পড়াচ্ছি বা পড়াব, বাড়িতে আলোচনা করেছি। খুব সাধারণ উদাহরণ বলছি। মানুষের মনের কুসংস্কার বা সেখান থেকে ধর্মান্ধতা, সমাজের বৈষম্যমূলক আচরণ, বিচ্ছিন্নতাবাদ- এ সব নিয়ে আমরা পড়াশোনা করেছি, আমাদের সময় এ সব নিয়ে পরীক্ষায় রচনা লিখতে দেওয়া হত। তেমন কোনও একটা বিষয় হয়তো আমি পড়াব, তার আগে বাড়িতে এমনিই… কথা বলতে-বলতেই প্রসাদকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘‘লালন ফকিরের একটা লাইন বল তো, যেটা দিয়ে রচনাটা শুরু করানো যায়…।’’ ওর থেকে শুনে সেটা বাচ্চাদের বলেছি। আমাদের বিষয়গুলো কমন ছিল। আবার কখনও প্রসাদ বাইরে অন্য কাজ করছে হয়তো, হঠাৎ বলল, ‘‘শোন, ওই লাইনটা মনে পড়ছে না, ওই রবীন্দ্রসঙ্গীতের শেষের দু’টো লাইন মনে পড়ছে না,’’ তখন আমি বলে দিলাম। শিক্ষার এই আদান-প্রদান আমাদের মধ্যে চলতেই থাকত…।

গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন, আমাকে ইন্ডাস্ট্রিতেও স্নব ভাবে সবাই, স্টুডেন্টরাও হয়তো প্রথমে তাই-ই ভাবত: সোমলতা আচার্য চৌধুরি

আরও পড়ুন, ‘‘আমার কাছে গান শিখতে এসে বাচ্চাগুলোর যদি মনুষ্যত্ব জন্মায়, তা হলে আমি অনেক বেশি খুশি হই: লোপামুদ্রা মিত্র

Next Article